সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন। শিশু মুনতাহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ। 

গত এক সপ্তাহ আগে খুন করে নিজ বসতঘরের পার্শ্ববর্তী একটি খালে শিশু মুনতাহার মরদেহ গুম করে রাখে মুনতাহার প্রতিবেশী শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মাসহ আরও কয়েকজন। মাত্র ৬ বছরের শিশুকে খুন করে তার মরদেহ গুম করে বিগত ৭ দিন ধরে স্বাভাবিক আচরণ করে গেছেন ঘাতকরা। এতে বিস্মিত হয়েছেন প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত তিন নভেম্বর দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল মুনতাহা আক্তার জেরিন। সেদিন বিকাল থেকেই নানা দিকে খোঁজ চালানো হয় নিঁখোজ মুনতাহার। সেদিন থেকে মুনতাহাকে খুঁজতে সবার সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন ঘাতক মার্জিয়া ও তার মা আলিফ-জানও। তারাও মুনতাহার পরিবারসহ গ্রামের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেন শিশুটির। তাদের আচরণে কেউ বুঝতেই পারেনি এই ঘটনায় তারা সম্পৃক্ত।

স্থানীয় প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে ধারস্থ হন কানাইঘাট থানা পুলিশের। মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ একটি সাধারণ ডায়েরি করেন কানাইঘাট থানায়। এরপর থেকেই সিলেটে নগরীসহ সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশকে নিয়ে তল্লাশি চালান। কিন্তু কোথাও শিশুটির হদিস মেলেনি। পরে ১০ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি খাল থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে শনিবার রাতে মুনতাহার প্রতিবেশী ও গৃহশিক্ষক মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় সিলেট জেলা পুলিশ। পরে রাত ১টার দিকে কানাইঘাট থানা পুলিশের একটি দল মুনতাহার বাড়ি এলাকায় তল্লাশী চালায়। ভোর ৪টার সময় খাল থেকে তুলে মুনতাহার প্রতিবেশী আব্দুল ওয়াহিদ মটরের পুকুরে মরদেহ ফেলে দেওয়ার সময় স্থানীয় জনতার ধাওয়ায় আটক করা হয় মার্জিয়ার মা আলিফ-জানকে। এরপরই থানা পুলিশের দল গিয়ে আটক করে নিয়ে আসে মার্জিয়া, মা, নানিসহ সর্বমোট ছয়জনকে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের গ্রামের এই ঘটনা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এই ঘটনা কানাইঘাটের জন্য একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের যেন রেহাই না দেওয়া হয়। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।

আসামিদের গ্রেপ্তার ও আদালতে পাঠানোর বিষয়ে সিলেটে জেলা পুলিশের কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অলক শর্মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা চারজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত ৫ দিনের  রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। স্পর্শকাতর এই মামলার বিষয়ে আমরা অধিক তদন্ত করছি, আশা করি রিমান্ডে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।

প্রসঙ্গত,গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে শিশু মুনতাহা। দুপুরের দিকে বাড়ির পাশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে বাড়ি না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তাকে পাননি। পরবর্তীতে গত শনিবার (৯ নভেম্বর) কানাইঘাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ মামলা করা হয়। এরপর রোববার ভোররাতে বাড়ির পাশে খাল থেকে মুনতাহার মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ সেটাকে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে চারজনকে। পরে সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদল ৪ আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মাসুদ আহমদ রনি/আরকে