ফেনীতে এইচপিভি টিকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা ‘ভ্রান্ত’ ধারণা
ফেনীতে চলছে মাসব্যাপী জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম। তবে মাঝপথে এসে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
টিকাদান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টিকা দিলে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব, ছেলে সন্তান হবে না, দেখা দিতে পারে বড় ধরনের শারীরিক জটিলতা— এমন সব ভ্রান্ত ধারণা ও গুজব শতভাগ টিকাদান কর্মসূচির প্রধান অন্তরায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব গুজব সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক হলে এ কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) ফেনী পৌরসভার সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, গত ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এইচপিভি টিকা কার্যক্রমে ফেনী পৌর এলাকার ১০৭টি স্কুল-মাদরাসা ও ১৮টি ওয়ার্ডের ১৪ হাজার ১৮৯ জন কিশোরীকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেখানে ১১ নভেম্বর (সোমবার) পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৬০ জন কিশোরীকে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ শতাংশ।
এইচপিভি টিকা কার্যক্রমে ফেনী পৌর এলাকার ১০টি মাদরাসার একজন কিশোরীও টিকা নেননি। যেখানে টিকা গ্রহণ করলে কিশোরী নিঃসন্তান থাকবে, ছেলে সন্তান হবে না— এমন নানা গুজব ও ভ্রান্ত ধারণা কাজ করছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। পৌর এলাকার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্টারলাইন স্প্রাউট স্কুলে শতভাগ কিশোরী টিকা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ফেনী শিশু নিকেতনে ৫০ শতাংশ, ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৫ শতাংশ ও আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসার ৯০০ জন কিশোরীর মধ্যে মাত্র ১৯৮ জন টিকা গ্রহণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তালিমুল উম্মাহ মডেল দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, টিকা গ্রহণে কিশোরীদের কিছুটা অনীহা রয়েছে। আমি এ প্রতিষ্ঠানে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের জামিয়া হাফসা মহিলা মাদরাসার এক শিক্ষক বলেন, টিকা গ্রহণের পর বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে-অভিভাবকদের মধ্যে এমন একটি কথা উঠেছে। সেজন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বুঝালেও টিকাগ্রহণের প্রতি তারা অনীহা প্রকাশ করেন।
এদিকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত নিরাপদ ও কার্যকর বলে জানিয়েছে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। সংগঠনটি বলছে, এই টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এই টিকা নেওয়ার ফলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন কোনো জটিলতা হয় না, বরং এই টিকা ক্যান্সার থেকে জরায়ুমুখ সুরক্ষিত রাখে।
সভায় ফেনী আলিয়া মাদরাসার বালিকা শাখার এক শিক্ষক বলেন, মাদরাসার যেসব মেয়ে শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে কারো কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। টিকা গ্রহণে আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ডা. কৃষ্ণপদ সাহা বলেন, পৌর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ডে সপ্তাহে চারদিন এইচপিভি টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
টিকা কার্যক্রম প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ও দায়িত্বরত প্রতিনিধি খাদিজা আহমেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইচপিভি টিকা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও ভ্রান্ত ধারণার ফলে টিকা কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি। এটি কোনো নতুন টিকা নয়। টিকা গ্রহণের পর ভবিষ্যতে প্রভাব পড়বে এমন প্রমাণও মেলেনি। এছাড়া ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রচারণা কার্যক্রমে কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও নির্দিষ্ট সময়ে টিকা কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা চলছে।
তারেক চৌধুরী/এমএ