আন্দোলনে নিহত সবুজের মা
‘আমার ছেলেকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে’
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন যুবদল কর্মী সবুজ আহমেদ। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের সিঙ্গার মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
মানববন্ধনে জেলা বিএনপির সদস্য আলামিন রানা, জেলা যুবদলের সাবেক সহ তথ্য গবেষণা সম্পাদক নেতা শরিফুল ইসলাম শরিফ, নিহত সবুজের মা সেলিনা খাতুন, স্ত্রী রেশমা খাতুনসহ এলাকার ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
এ সময় নিহত সবুজের মা সেলিনা খাতুন বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাইতে আসছি। এটা যে কত কষ্টের তা শুধু একজন মা জানে। আমার ছেলেকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে। প্রায় চার মাস হতে চললেও আমার ছেলে সবুজ হত্যার আসামিরা গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমার মতো আর কেউ যেন সন্তান হারা না হয়। ছেলের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি দেখে মরতে চাই।
নিহত সবুজ আহমেদের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল আমার স্বামী। আমার নিরপরাধ স্বামীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল ওরফে বান্টা বাবুলের নেতৃত্বে আওয়ামী-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। আমার নির্দোষ-নিরপরাধ স্বামীকে হত্যা করেছে তারা। আমার সন্তানদের এতিম করেছে, আমাকে করেছে স্বামীহারা। আল্লাহ তাদের বিচার করবে। এখন আমার একটাই দাবি আমার স্বামী হত্যার বিচার করতে হবে। জড়িতদের ফাঁসি দিতে হবে। তাহলে তার আত্মা শান্তি পাবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
জেলা বিএনপির সদস্য আলামিন রানা বলেন, অতিদ্রুত যুবদল কর্মী সবুজ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাই পুলিশ-প্রশাসন নিশ্চুপ না থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারের কাজ করুন। অন্যথায় আরও কঠোর আন্দোলন হবে।
জেলা যুবদলের সাবেক সহ তথ্য গবেষণা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, সাতদিনের মধ্যে সবুজ হত্যায় জড়িত এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে এর চেয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে পুলিশ। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে সারা দেশের মতো কুষ্টিয়ায়ও আনন্দ মিছিল করে ছাত্র-জনতা। মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে শহরের আমলাপড়ায় শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল ওরফে বান্টা বাবুলের নেতৃত্বে আওয়ামী-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা সবুজসহ বেশকয়েকজনের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে সবুজ আহমেদ নিহত হন। এ হামলার ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েকজন। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী রেশমা খাতুন বাদী হয়ে শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল ওরফে বান্টা বাবুলসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রাজু আহমেদ/এমএ