ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের দখলে থাকা জমি উদ্ধার করেছে বরিশাল সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনের এতিমখানা মার্কেটের নামে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে দখলমুক্ত করা হয়। জিয়াউল হক হচ্ছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বড় ভাই।

যদিও জিয়াউল হকের পরিবার দাবি করেছেন, সরকারের কাছ থেকে আগে ইজারা নিয়ে জমিটি ব্যবহার করলেও সড়কটি ফোর লেনে উন্নীত করায় সড়ক ও জনপথ জমিটি নিয়ে গেছে।

এতিমখানা মার্কেটের ঈশান ফার্মেসীর শাহিনুর রহমান খান বলেন, এনটিএমসির সাবেক পরিচালক জিয়াউল আহসান যখন র‌্যাবে ছিলেন তখন র‌্যাবের আরেক সদস্য কামরুলকে দিয়ে তার সমস্ত ব্যবসার দেখভাল করাতেন। কামরুলই এতিমখানা মার্কেট পরিচালনা করতেন। ২০২১ সালে আমি পজিশন বাবদ অগ্রিম সাড়ে ৪ লাখ ও ডেকোরেশন বাবদ ৩ লাখ টাকা দেই। প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা ভাড়া ছিল। আমাদেরকে বলেছিল ২০৩০ সাল পর্যন্ত ইজারা আছে, কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, জিয়াউল আহসানের বড় ভাই জিয়াউল হক তাদের বাবার নামে করা নাসির উদ্দিন এতিমখানা ও হাফিজি মাদরাসা দেখভাল করতেন। এতিমখানা মার্কেটের জমিও তার নামে ইজারা নেওয়া ছিল।

মার্কেটের ভোজন বিলাস রেস্টুরেন্টের মালিক আল-আমিন মল্লিক বলেন, ২০১৬ সালে মার্কেটটি গড়ে তোলা হয়। তখন আমি ১৬ লাখ টাকা অগ্রিম দেই কামরুলের কাছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১ নভেম্বর আরও ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। জিয়াউল আহসান সকল ব্যবসা কামরুলকে দিয়েই চালাতো।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম বলেন, পূর্ব থেকেই নোটিশ দিয়ে আমরা রূপাতলী থেকে সাগরদী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। পর্যায়ক্রমে ঢাকা-বরিশাল কুয়াকাটা মহাসড়কের রাস্তার দুই পাড়ে সব অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে।

তিনি বলেন, দখলদারদের কোনো পরিচয় হতে পারে না। দখলদারকে আমরা দখলদার হিসেবেই চিনতে চাই। সড়ক ও জনপথের জমি অবৈধভাবে দখল রাখবে, সে যত বড় ক্ষমতাবানই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল হক দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বোন লুৎফুন্নাহার বলেন, বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা ও হাফিজি মাদরাসার নামে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে মার্কেট গড়ে তার আয়ে এতিমখানাটি চলতো। দেখভাল করতেন আমাদের বড় ভাই জিয়াউল হক। সম্প্রতি ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। আমরা পুনরায় ইজারা নিতে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সরকার ইজারা দেয়নি। আমরাও সরে এসেছি।

তিনি বলেন, ওখানকার দোকানদারদের সাথে কথা বলেছি। তারা যে অগ্রিম টাকা দিয়েছিল তা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।

ঝালকাঠির সদর উপজেলার ৯ নং শেখেরহাট ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের গ্রামের বাড়িতে জিয়াউল আহসানের পরিবার এতিমখানা ও মাদরাসা গড়ে তোলে। 

১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য স্বপন খান বলেন, এতিমখানায় আগে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। কয়েকমাস হলো শিক্ষার্থী কমে গেছে। এখন কয়েকজন শিক্ষক ও অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী আছে।

উল্লেখ্য, মাদরাসা ও এতিমখানার নামে বরিশালের রুপাতলীতে গড়ে তোলা এতিমখানা মার্কেটে ২৮টি স্টল ছিল।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর