ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের পতন হলেও দাপট কমেনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা রুবেল মিয়া ওরফে বদুরের।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আপন ফুফাতো ভাই ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল হোসেনের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন অপকর্মসহ এলাকার সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করতেন। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে যাওয়ার পরেও এখনো তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাপটে চলছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের চান্দর ও স্বল্প হাতকোড়া গ্রামবাসীর আয়োজিত মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতা রুবেলের অপকর্মের কথা তুলে ধরে সাধারণ মানুষদের হয়রানির প্রতিবাদ ও তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে শাস্তির দাবি জানায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রুবেল মিয়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসরাফিল হোসেনর বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। ওই সময় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি ও কয়েকজনকে জেলও খাটিয়েছেন তিনি।

সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট (অব.) আমজাদ হোসেনসহ তার চাচাতো ভাইয়ের জমি দখল করে রাস্তা বানানোর অভিযোগও করেন গ্রামবাসী। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলে আবারও অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছেন রুবেল।

ভুক্তভোগী সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট (অব.) আমজাদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগে ক্ষমতায় থাকাকালীন ছাত্রলীগ নেতা রুবেল মিয়ার ক্ষমতার জোরে আমাদের পরিবারের ৫২ শতাংশ জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে রাস্তা নির্মাণের জন্য মাটি ফেলেছে। সে সময় তাদেরকে বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালান। সম্প্রতি আমাদের জমির ওপর রাস্তা তৈরির জন্য ভেকু নিয়ে এসে মাটি কাটতে শুরু করেন। পরে আমরা বিষয়টি জানতে পেরে এলাকাবাসীর সমন্বয়ে তাকে বাধা দিই এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু রুবেল এখন বিএনপির লোকজনের সঙ্গে মিলে এখনো দাপট দেখাচ্ছেন।

আরেক ভুক্তভোগী শামসুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের শাসন আমলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রুবেল মিয়া ক্ষমতার দাপটে অবৈধভাবে মানুষের জমি দখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানোসহ চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ পতনের পরও তার ক্ষমতার দাপট কমেনি। তিনি আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে অপকর্ম করতেন, আর এখন বিএনপির লোকজনের সঙ্গে মিলে অপকর্ম করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার জন্য থানা পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রুবেল মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করেছি। কারণ আমি পেটের জন্য কাজ করে থাকি। আমার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা কথা, আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। তবে আমার বাড়িতে যাতায়াতের জন্য খাস জমিতে রাস্তা নির্মাণের জন্য ভেকু নামিয়েছিলাম। কিন্তু মানুষের চাপের মুখে ভেকু উঠিয়ে নিয়ে যাই।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম আমান উল্লাহ বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী আমজাদ হোসেন, শামসুর রহমান, হৃদয় মিয়া, আলী হোসেন ও মলি বেগমসহ চান্দরা ও স্বল্প হাতকোড়া শতাধিক নারী ও পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

সোহেল হোসেন/এএমকে