আবু সাঈদ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে দিয়েছে
আবু সাঈদের আত্মত্যাগের রংপুরকে বৈষম্যমুক্ত করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠনসহ সকল পর্যায় থেকে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, আবু সাঈদ পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে শুধু জীবনই দেয়নি, প্রতিবাদী এ যুবক বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে দিয়েছে। তার প্রাণের বিনিময়ে দেশের মানুষ আজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। এই স্বাধীনতাকে ধারণ করে অবহেলিত উত্তর জনপদের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী কারমাইকেল কলেজের উন্নয়ন বৈষম্য দূর করে সংকট ও সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করে কারমাইকেল কলেজের অতীত অর্জন ও গৌরবকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করতে চাই। এখানকার শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বারোপ করতে চাই। যাতে কারমাইকেল কলেজ সেরাদের তালিকায় আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে কারমাইকেল কলেজের ১০৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জিএল হোস্টেল মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভা ও কেককাটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তৃতায় অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ) যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান, কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উপাধ্যক্ষ ড. রেহেনা খাতুন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর দিলীপ কুমার রায়, কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রকিবুস সুলতান মানিক। স্বাগত বক্তব্য দেন ১০৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. শফিক হোসেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা কারমাইকেল কলেজে শিক্ষক সংকট নিরসন, বিভিন্ন বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট) বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা বাড়ানো, বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ, গণগ্রন্থাগারে চাহিদানুযায়ী বইয়ের ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর চর্চাক্ষেত্রে সহায়তা বাড়ানো এবং ছাত্র সংসদ চালু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত এবং পরামর্শ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তারা কারমাইকেল কলেজ থেকে বৈষম্য দূরীকরণ ও সমউন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল উর্ধ্বতনদের প্রতি আহ্বান জানান। দুই দশক আগে ২০০১ ও ২০০৬ সালে কলেজটিকে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে পৃথক দুটি আইন পাস হয়েছে। কিন্তু আজও তা কার্যকর হয়নি। তবে এবার জুলাই বিপ্লবের চেতনায় বৈষম্য দূর করে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অতিথিরা। পরে কেক কেটে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভা শেষ হয়।
এদিকে বিকেলে সমাপনী পর্ব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী, রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। সভাপতিত্ব করেন কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
সমাপনী আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় অংশ নেয় স্পন্দন, কানাসাস, বিতর্ক পরিষদ, কাকাশিস, আবৃত্তি সংসদের শিল্পীরা। তাদের গান, নাচ, আবৃত্তি, রম্য বিতর্ক ও মুকাভিনয়ে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীসহ আগতরা।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবিউল ইসলাম। পরে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে লালবাগ এলাকা প্রদক্ষিণ করে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মিলনমেলায় পরিণত হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ