বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগে কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারের (এতিমখানা) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে নিম্নমানের খাবার দেওয়া, শিশুদের জন্য সরবরাহকৃত মালামাল বিক্রি, শিশুদের নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তি ও পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে সেখানকার শিশুরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সমাজসেবা কর্মকর্তাদের জিম্মায় দেওয়া হয় তাদের।

এদিকে নির্যাতনের শিকার হয়ে রিজভী নামের এক শিশু এক সপ্তাহ আগে সেখান থেকে পালিয়েছে। সেদিন থেকে নিখোঁজ রয়েছে শিশুটি।

আন্দোলনকারী শিশুদের অভিযোগ, শিশু পরিবারে দৈনিক খাবার তালিকায় যে খাবার সরবরাহের কথা, তা খেতে দেওয়া হয় না। বিপরীতে নিম্নমানের খাবার অল্প পরিমাণে দেওয়া হয়। পচা মাছ খাওয়ানো হয়। গরু বা খাসির মাংস খাবার তালিকায় থাকলেও বিশেষ দিন ছাড়া সেগুলো রান্না করা হয় না বা খেতে দেওয়া হয় না। এ ছাড়া প্রতিদিন মোটা চাল ও পানির মতো পাতলা ডাল রান্না করে দেওয়া হয়।

তারা আরও বলে, খাবার নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। শিশু পরিবারের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস ও উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান স্যার আমাদের জন্য সরবরাহ করা মালামাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন সময় এতিম শিশুদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে থাকেন। কাজ করতে শিশুদের বাধ্য করেন তারা। না করলে আমাদের বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। মারধর ও নির্যাতন করা হয়। তাদের নির্যাতনে এখান থেকে রিজভী পালিয়েছে। সে এখানো নিখোঁজ রয়েছে। আমরা অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পদত্যাগ ও শাস্তি চাই।

এদিকে গত ২ নভেম্বর থেকে রায়হান হোসেন রিজভী (১২) নামের এক আবাসিক এক শিশু নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।

নিখোঁজ রিজভীর স্বজনরা বলেন, কুষ্টিয়া শিশু পরিবারে রিজভী তিন বছর ধরে থাকে। হঠাৎ করে গত ২ নভেম্বর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। শিশু পরিবারের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন অনিয়ম-দুর্নীতি করেন। শিশুদের ঠিকমতো খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন না। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্নভাবে শিশুদের নির্যাতন করেন। রিজভীকেও তিনি নির্যাতন করেছেন তারা। রিজভী নিখোঁজ রয়েছেন, আমরা খুব টেনশনে আছি। আমরা রিজভীকে ফিরে পেতে চাই। রিজভী নিখোঁজের দায় ইলিয়াস হোসেনের। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস ক্যানেলপাড়া এলাকায় এতিম ও অনাথ শিশুদের জন্য একটি সরকারি শিশু পরিবার চালু করে সরকার। জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে সরকারি শিশু পরিবারে ১০০ আসন আছে। বর্তমানে এই পরিবারে ভর্তি শিশু আছে ৬২ জন।

সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের নির্যাতন ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হোক। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেলে শাস্তি মেনে নেবো আমরা।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, শিশু পরিবার থেকে রিজভী নামের এক শিশু পালিয়েছে। সে বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিশুটিকে খুঁজে পেতে কাজ করছে পুলিশ। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজন আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে সমাজসেবা কর্মকর্তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপতত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানকার অভিযুক্তদের বদলি করে নতুন সেটআপ থাকবে। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন দেওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও নির্যাতনের অভিযোগটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজু আহমেদ/এএমকে