মামলা থেকে নাম কাটার জন্য জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মাহবুবুর রহমান লাভলুকে ফোন করেছেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জহুরা বেগম। ফাঁস হওয়া তাদের এই ফোনালাপটি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) ওই দুই নেতার আলাপচারিতার একটি অডিও কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পড়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার (মাহবুবুর রহমান লাভলু) বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানিয়েছেন জামালপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সজিব খান।

যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান লাভলু ও যুব মহিলা লীগের সভাপতি জহুরা বেগমের ২ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কল রেকর্ড তুলে ধরা হলো—

জহুরা : আসসালামু আলাইকুম, ভাই।

লাভলু : ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছেন?

জহুরা : কই ভালো ভাই? শেষ পর্যন্ত থাকবার দিলেন কই।

লাভলু : আপনে গড়ে এলাকার গামা উকিলে এগুলো করছে।

জহুরা : হ, গামা আর ইয়ে মানিক ভাই (বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর) বলে এগুলা জানেই।

লাভলু : মানিক ভাই আপনের বিষয়টা জানেন না।

জহুরা : মামলার তালিকা বলে না দেখে দেয় না। থানায় দেওয়ার আগে বলে তালিকা দেইখা দেয়। এখন আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানই ফেরত দিবো? এখন এগুলোর মধ্যে মামলা দিয়া থুইলে কেমনে কী করি!

লাভলু : ঠিকই আছে। মামলার মধ্যে পইরা থাকলে আরেক ঝামেলা।

জহুরা : নাম কি চার্জশিট থেকে কাটা যাবো?

 

লাভলু : আপনে আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন। চার্জশিট থেকে আমি নাম কেটে দিমুনি।

জহুরা : এখন কোনো কিছু করা যাবো না?

লাভলু : এখন মানিক ভাইয়ের সঙ্গে বসে কথা বলতে হবো।

জহুরা : আমি তো এখন মামলার ভয়ে বের হতে পারছি না। উপজেলা থেকে কাগজপত্র সব আইসা পরতাছে। কোর্টে যাইতে বলতাছে সমন্বয়কারীরা। সবাই রিট করবো। এলাকায় যদি না থাকতে পারি, জনগণের কাজই যদি না করতে পারি, শুধুমাত্র উপজেলার চেয়ারম্যান থাকবো না। আর যে মেম্বাররা পলাতক তারা থাকতে পারবো না।

লাভলু : আপনার বলে রাস্তার ঠিকাদারি কাজ চলতাছে। ওইডা আমাকে দিয়া দেন, আমি করি।

জহুরা : আমার তো নিজস্ব কোনো কাজ নাই। ওইটা আমার না। এইল্লা মানসে বাড়তি কথা কয়। মাইনসে ফেসবুকে দিছে কোটি কোটি টাকা কামাইছি। এই করছি, সেই করছি। দয়া করে মানিক সওদাগরের সাথে বইসেন তো দেখি।

লাভলু : ঠিক আছে। আপনে আমি কালকে বসমু।

জহুরা : আমি তো আপনাদের সঙ্গেই কাজ করতে চাই মিলেমিশে।

কল রেকর্ডের বিষয়ে উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মাহবুবুর আলম রহমান বলেন, ‘একটি ছেলে আমাকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে মামা উনি তো (জহুরা বেগম) পলাতক। কোনো কাজ করতে পারছে না, একটু কথা বলেন। পরে আমি কথা বলি। আমি সহজ-সরল মানুষ ভাই। তিনি ফোনে কথা বলার শুরুতেই মামলা নিয়ে কথা বলে। মামলার বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই। কাজের জন্য তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

তবে যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও বকশীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জহুরা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার মোবাইলে একাধিকার কল দেওয়া হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদী বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর বলেন, ‘রেকর্ড শুনেছি। এখন একজন যদি বলে, অমুকের কাছে গেলে মামলা শেষ হবে। কিন্তু আমার কাছে তো আসতে হবে শুনতে হবে। মামলা আমিই করছি, আমিই শেষ করবো।’

জামালপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সজিব খান বলেন, ‘কল রেকর্ডটি এখনো শুনিনি। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুত্তাছিম বিল্লাহ/এএমকে