গাজীপুরে মালেকের বাড়ি এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন টিএনজেড অ্যাপারেলস্ লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে আট কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। ১০ ঘণ্টা ধরে চলছে এমন অবস্থা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় শ্রমিকদের বিক্ষোভ। এরপর তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৭টা) শ্রমিকরা সেখানে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এ পর্যন্ত দুইবার অবরোধ তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েও তুলে নেননি। সবশেষ তারা রাত ১০টায় অবরোধ তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টানা ১০ ঘণ্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে আট কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা দীর্ঘ সময় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণে ঢাকার দিকে টঙ্গীর কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছেছে যানজট। আমরা অনেক গাড়ি বিকল্প পথে চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া মহাসড়কে অনেকগুলো ডাইভারসন আছে, সেগুলো দিয়ে চালক ও যাত্রীরা চলাচল করছে। আমরা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ, উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বার শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি—এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা প্রথমে দুপুর ২টায়, পরে বিকেল ৫টায় অবরোধ তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েও অবরোধ তুলে নেননি। এখন তারা বলছেন, রাত ১০টায় অবরোধ তুলে নেবেন। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনো আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে মহাসড়কের যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।

দিনভর যানজটে আটকা পড়েছেন ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা। স্ত্রী ও তিন বছরের শিশু নিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ঢাকা রওনা দিয়েছিলেন আসলাম খান। তিনি বলেন, সকাল ৯টায় ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে রওনা দিয়ে সাড়ে ১০টা থেকে এখানে বসে আছি। সামনে যাওয়ার কোনো অবস্থা নেই। আমরা দোকান থেকে খাবার কিনে খেয়েছি, কিন্তু আমার বাচ্চা তো দোকান থেকে কেনা কিছু খায় না। তাকে নিয়ে বিপদে আছি। সে খুব কান্নাকাটি করছে। বিকল্প পথে যাওয়ার কোনো অবস্থাও নেই।

বাসচালক কালাম মিয়া বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে যানজটে বসে আছি। আন্দোলনকারীরা প্রথমেই আমার গাড়ি আটকিয়েছে। গাড়ি নিয়ে পেছনে ফিরে যাব তারও কোনো সুযোগ নেই।

বাসের যাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, সকাল পৌনে ১০টায় আমার গাড়ি আটকানো হয়। আমার ছয় মাসের বাচ্চাসহ চারজন মহিলা গাড়ির ভেতরে আছে। এরকম নাকি আরও দু-তিনবার করেছে। সরকারের উচিত একটা সমঝোতা করা।

গাজীপুর শিল্পপুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হন। এক পর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

শিহাব খান/এএমকে