রাষ্ট্র সংস্কারের আগে নির্বাচন দিলে জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে গণঅধিকার পরিষদের রংপুর মহানগর ও জেলা কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী এই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে আপনাদেরকে সেটাকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে একই সঙ্গে ভাবতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের আগে নির্বাচন দিলে জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। রাজনৈতিক দলগুলো ৫৩ বছর ক্ষমতায় ছিল। আজকে যে ভোটের অধিকার, ন্যায় বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, যে সরকার ক্ষমতায় থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন-নিপীড়ন, গণবিরোধী অবস্থান, সব সরকারের আমলে আমরা দেখেছি। আমরা চাই জনবান্ধব প্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং যারা ক্ষমতায় থাকবে তারা ক্ষমতাকে ভোগের বিষয়বস্তু মনে করবে না। জনসেবাকে প্রাধান্য দিয়েই তারা রাষ্ট্রনীতি ঠিক করবে এবং জনগণ ক্ষমতায় বসাবে কারা জনপ্রতিনিধি হবে সেটা নির্ধারণ করবে।

আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে ধারণ করে যুবসমাজকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে সাবেক ভিপি বলেন, আবু সাঈদ আপনাদের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের কৃতিসন্তান। আবু সাঈদের বীরত্বগাথা অবদানকে আপনারা ভুলতে দেবেন না। আবু সাঈদের নামে যেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হয়।

তিনি বলেন, যারা ধোঁকাবাজি করে জনগণের কাছে ভোট ভিক্ষা করে, গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের বন্ধু হওয়ার কথা বলে ভোট নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়ে সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে, ছেলে-মেয়েদের উন্নত স্কুলে পড়িয়েছে, কিন্তু অবহেলিত রংপুর অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করে নাই, এমন প্রতারক জনপ্রতিনিধিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে। আবু সাঈদের আত্মত্যাগের এবং তারুণ্যের সংগ্রামের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে দেশের প্রশ্নে আপোষহীনভাবে একমাত্র কাজ করতে পারে তরুণরাই। সেই তরুণদের নিয়েই আমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে, এর জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

তিনি বলেন, আগামীতে রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং চার বছর মেয়াদি সংসদের সংস্কার প্রস্তাবনা দিচ্ছে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়টি হচ্ছে এই গণঅধিকার পরিষদ যদি সরা দেশ মিলিয়ে ৫০ শতাংশ ভোট পায় তাহলে গণঅধিকার পরিষদের দেড়শ এমপি থাকবে। কোনো দল যদি ১০ শতাংশ ভোট পায় ৩০ জন এমপি থাকবে। কোনো দল যদি এক শতাংশ ভোটও পায় তার ৩ জন এমপি থাকবে। এই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনই একমাত্র রাজনীতিতে একটা ভারসাম্য আনতে পারে। আগামীতে স্বৈরাচারী হওয়া থেকে কোনো সরকারকে ঠেকাতে থাকে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা যেন গড়ে ওঠে সেজন্য এখন থেকেই রাষ্ট্র এবং রাজনীতির ব্যবস্থা কি হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

জাতীয় পার্টিকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে ইঙ্গিত করে নুরুল হক নুর বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো জায়গা নেই। আমাদের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে আওয়ামী বাকশালীদের জায়গা নাই। আওয়ামী লীগের দোসর যারা ছিলেন তাদের কোনো জায়গা হবে না। যারা আস্ফালন দেখাচ্ছেন, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা অনুরোধ করব অনতিবিলম্বে গণহত্যাকারী এবং এর দোসরদেরকে গ্রেপ্তার করে এই রংপুরসহ সারা বাংলাদেশে জনগণকে স্বস্তি প্রদান করুন। আপনারা (প্রশাসন) যদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন, জনগণ কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবে। কিন্তু আমরা চাই না জনগণ সেটা করুক। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত লড়াই সংগ্রাম, প্রাণদানের মধ্যদিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী করার জন্য আমরা এই সরকারকে স্থিতিশীল করতে চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে চাই।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, জাতীয় বেইমান পার্টি মনে করে রংপুর তাদের ঘাঁটি। আমরা বলতে চাই, রংপুরের মানুষ জাতীয় বেইমান পার্টিকে বয়কট করেছে। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে, সুতরাং রংপুরের মাটিতে জাতীয় পার্টির জায়গা হবে না। রংপুরের সাবেক অবৈধ ডামি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা একজন দুর্নীতিবাজ। তার বিরুদ্ধে দুদকে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এই দুর্নীতিবাজরা আগামীতে রংপুর থেকে এমপি, মন্ত্রী, মেয়র হতে পারবে না। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য ও রংপুর বিভাগের সমন্বয়ক হানিফ খান সজীবের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা মোন্নাাফ, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি এরশাদুল হক, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, পঞ্চগড় জেলার সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া, রংপুর মহানগর গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান, রংপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শেরে  খোদা আসাদুল্লাহ প্রমুখ। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে গণঅধিকার পরিষদসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জিলা স্কুল মাঠে সমবেত হন। প্রায় এক ঘণ্টার সমাবেশে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর মাঝে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।

এর আগে, বিকেল ৩টার দিকে নুরুল হক নুর ও রাশেদ খাঁনসহ গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরের পীরগঞ্জে আবু সাঈদের গ্রামের বাড়ি বাবনপুর জাফরপাড়ায় যান। সেখানে তারা আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে