নিষেধাজ্ঞা শেষেও নাগালের বাইরে ইলিশের দাম
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ইলিশের দাম। সরবরাহ কম থাকায় দামও অনেক বেশি, আকার ভেদে প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়েছে বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পাঁচ দিন পরেও দাম বেশি থাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগরের মাছ না আসা এবং নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় দাম বেশি।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৬শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, ৭-৮শ গ্রামের ইলিশ ১২শ টাকা, ৫শ গ্রাম ওজনের মাছ ১ হাজার, ৩-৪টিতে কেজির মাছ ৭-৮শ টাকা এবং ৫-৬টিতে কেজির মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৬শ টাকা করে।
বিজ্ঞাপন
ইলিশের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে থাকা অন্য মাছের উপরও। অন্যান্য মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম কমেনি একটুও। বরং ভেটকি, রুই, কাতলা, চিংড়ি ও ট্যাংরা মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। ভেটকি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে, রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্রাশকার্পসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। হরিণা, চাকা ও চামি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬-৭শ টাকা পর্যন্ত। তবে পাঙাশ ও তেলাপিয়া আগের দাম অর্থ্যাৎ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সব পণ্যের মতো মাছের দাম নাগালের বাইরে থাকায় টুকরো করে মাছ বিক্রির দাবি জানিয়েছেন সচেতন ভোক্তারা।
নুরুন নাহার নামের এক চাকরিজীবী বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো বেতনে চাকরি করি। তারপরও অনেক হিসেব করে বাজার করতে হয়। পছন্দের মাছ ক্রয়ের আগে অনেক চিন্তা করতে হয়। তাই স্বল্প আয়ের মানুষরা ইলিশ ক্রয়ের কথা চিন্তাও করেন না। এজন্য ইলিশসহ বেশি দামের বড় মাছ কেটে যদি টুকরো করে বিক্রি করা হয়, তাহলে হয়তো অনেকেই এই মাছের স্বাদ নিতে পারতেন বলে মন্তব্য করেন এই নারী।
রফিক হালদার নামের এক ক্রেতা বলেন, অবরোধ শেষে ইলিশ কিনতে আসছিলাম। কিন্তু দাম অনেক, তাই রুই মাছ কিনলাম। আর কিছু ছোট ইলিশ কিনেছি। যে অবস্থা বেশিরভাগ মানুষ ইলিশ খেতে পারবে না।
বাগেরহাট মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল সালাম বলেন, ইলিশের দাম আগের তুলনায় বেশি। ২২ দিনের অবরোধ শেষ হলেও জেলেরা সাগরে মাছ পাচ্ছেন না। সাগরে ডাকাতের প্রভাবও বেড়েছে। এখন বাজারে যে ইলিশ দেখছেন এগুলো সব পাশের জেলা বরিশালের বেকুটিয়াসহ বিভিন্ন নদীর মাছ। তাই দাম একটু বেশি। সাগরের মাছ আসা শুরু করলে দাম কমবে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে অবরোধের পাঁজ দিন পরেও শুক্রবার ভোরে বাগেরহাটের প্রধান সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণকেন্দ্র কেবি বাজারে কোনো ট্রলার আসেনি। যার কারণে কেবি বাজারে হিমায়িত সাগরের মাছ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান কেবি বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ আবেদ আলী।
তিনি বলেন, সাগরে এবার মাছের পরিমাণ কম। এখনও কোনো নৌকা আসেনি। তাই ইলিশ মাছের বেচাকেনা নেই, আমরা শুধু হিমায়িত মাছ বিক্রি করছি। এর কারণে বাজারে ইলিশের দাম বেশি।
বাগেরহাট ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে। আমরা নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাচ্ছি।
শেখ আবু তালেব/এএমকে