আত্মগোপনে থাকা সাবেক এমপি বাহারের ছবি ভাইরাল
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেওয়া কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আত্মগোপনে যাওয়ার তিন মাস পর তার ওই ছবিটি ভাইরাল হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বাহারের ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বেশকিছু ফেসবুক পেজ এবং আইডিতে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে। তাতে অনেককে নেতিবাচক কমেন্ট করতে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ইব্রাহিম সোহেল নামের একটি ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হ, ‘আল্লাহ ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। কুমিল্লার সাবেক সম্রাট আজ আসামি।’ ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট দেওয়ার পর কমেন্টে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্যও করছেন।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান সাবেক এমপি বাহার। পরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাকে নিয়ে ভারতের কলকাতায় আশ্রয় নেন। ভারতে পালানোর কিছুদিন পর বাহার ও সূচনার পৃথক দুটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সরকার পতনের তিন মাস পর আরও একটি নতুন ছবি ভাইরাল হলো। ওই ছবিতে দেখা যায়, গায়ে সাদা শার্ট, বুক পকেটে চশমা। মাথায় কালো ক্যাপ পরিহিত বাহার কারো কাঁধে হাত রাখার ভঙ্গিতে বসে আছেন। তার মুখে ধবধবে ছোট করে রাখা সাদা দাড়ি। আত্মগোপনে যাওয়ার পর সাবেক এমপি বাহারের দাড়ির রংও পাল্টে গেছে। আগে সবসময় বাহারের মুখে লাল দাড়ি শোভা পেলেও আত্মগোপনে যাওয়ার পর থেকে দাড়ি আর লাল কালার করছেন না।
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য বাহার গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। কেমো থেরাপি দেওয়ার ফলে তার মাথার চুলগুলো পড়ে গেছে। মুখের গঠনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তিনি এখনও ভারতেই অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি। যদিও সেসবের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সরকার পতনের পর নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকায় বাহারের নিজ বাড়ি ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। বাসা থেকে লুট করা হয় তার লাইসেন্স করা অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ অর্থ ও স্বর্ণালংকার। বাহারের সেই বাড়িতে এখন সুনসান নীরবতা। সেখানে একজন নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া আর কেউ থাকেন না।
পুলিশ সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পৃথক মিছিল ও সমাবেশে গুলি ও হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় বাহার ও তার মেয়ে সূচনাসহ দলীয় নেতাকর্মীরে বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ডিএমপি, জেলার সদর দক্ষিণ ও কোতয়ালি মডেল থানায় ডজনাধিক মামলা হয়েছে।
বাহার কুমিল্লা সদর আসনে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের দুইবারের সভাপতি। দীর্ঘ এ সময় তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি, হামলা, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার এবং সরকারি দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বিদেশেও করেছেন বিপুল অর্থ পাচার। এসব অভিযোগে বাহার ও তার মেয়ে সূচনার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সব ব্যাংকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ভারতে আত্মগোপনে থাকা বাহার ও তার মেয়ে সূচনার হোয়াটসআপে যোগাযোগ করেও তাদের সাড়া মেলেনি।
আরিফ আজগর/এএমকে