‘বেডাইনের (স্বামী) রাইখা (রেখে) যাওয়া ১০ কাঠা জমিতে আবাদ কইরাই সংসার চালাই। কিন্তু আত্তির (হাতি) জ্বালায় তো ধান না পাকতেই কাইটা আনা লাগতাছে। না কাটলে কষ্টের এই ধান আত্তির পেটে চলে যাইবে। তাই বাধ্য হইয়া নিজেই আধাপাকা ধানই কাটতাছি।’

কথাগুলো বলছিলেন কিষাণী নুরেদা বেগম। তার মতো শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বুরুঙ্গা কালাপানি বাতিকুচি সীমান্তবর্তী এলাকার অনেকে কৃষক আধা-পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, দেড় থেকে দুই সপ্তাহ সময় পেলে মেহনতের ফসল মোটামুটি গুছিয়ে ঘরে তুলতে পারতেন কৃষকরা। প্রায় প্রতিদিনিই বন্যহাতির আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

নুরেদা বেগম জানান, অনেক দিন হলো তার স্বামী মারা গেছেন। অভাবের সংসারে বাধ্য হয়ে ছেলে দুটোকে ঢাকায় কাজে পাঠিয়েছেন তিনি। অল্প একটু আবাদি জমিই তার শেষ সম্বল। তাও হাতির কারণে কোনো বছরই ঠিকমতো আবাদ ঘরে তুলতে পারেন না। তারা সীমান্তের মানুষ, আবাদি ফসল নিয়ে খুব বিপদে আছেন।

তিনি জানান, বছরের পর বছর বন্যহাতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই তাদের ধান চাষ করতে হয়। বর্তমানে হাতির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তাদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তাই পাকা ধান ঘরে তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাতির দলকে প্রতিরোধ করতে তারা ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে হাতি প্রতিরোধে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানান, দিনে হাতির দল পাহাড়ের উঁচুতে থাকে। বিকেল হলে নেমে আসে লোকালয়ে। প্রতি বছর ধান পাকার সময় হলেই বন্যহাতির দল হামলে পড়ে লোকালয়ের এই আধা পাকা ধান ক্ষেতে। ফসল বাঁচাতে দিন-রাত আগুন, লাইটসহ দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে দিতে হয় পাহারা। তবে অধিকাংশ কৃষক হাতির ভয়ে আধা পাকা ধান কেটেই ঘরে তুলছেন। কৃষকদের দাবি, পরিমাণে কম পেলেও বড় ধরনের ক্ষতি হবে না তাদের। বেশি পাকার জন্য অপেক্ষা করলে এই ফসল হবে হাতির খাবার।

বাতকুচি গ্রামের কৃষক দুদু মিয়া বলেন, অল্প একটু জমিতে আবাদ করেছি। ফলনও ভালো অইছে, কিন্তু একসপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে হাতি অত্যাচার করছে। আজ হাতির দলের পায়ে পিষ্ট করে সব ধান নষ্ট করেছে। এলাকার সবাই মিলে রাত-দিন ক্ষেত পাহারা দিতে হচ্ছে। সব সময় আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকি।

বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, হাতি প্রতিরোধে কৃষকদের সঙ্গে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা কাজ করছে। এছাড়া হাতি যে-সব কৃষকের ফসল নষ্ট করেছে তাদের বন বিভাগের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে।

মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এফআরএস