গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সবশেষ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি সংগ্রামের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো— এখানে শোষণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা জীবন দিয়ে একেকটা জুলুমবাজ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু তারপরে যারা ক্ষমতায় বসেছে তাদের কেউই জনগণের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন পূরণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। তারা পাহারা দিয়েছে বড়লোকের সম্পদ, সুযোগ করে দিয়েছে ধনিক শ্রেণিকে লুটপাটের। এভাবে গত ৫৩ বছরে ধনী-গরিবের বৈষম্য হয়েছে আকাশ-পাতাল।

গতকাল সর্বহারা বিপ্লব বার্ষিকী ও বাসদের (মার্কসবাদী) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে লাল পতাকা মিছিল ও রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাসুদ রানা।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব সংগ্রাম ও জীবনদানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। এত বড় ত্যাগ ও সংগ্রামের ফলে আন্দোলনের মধ্য থেকেই দাবি উঠেছে সমাজের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার। ২৪’র গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩ মাসের রাষ্ট্র পরিচালনা জনগণকে ধীরে ধীরে হতাশ করে তুলছে। শেষ পর্যন্ত এ সরকারও মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।

বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি রংপুরের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এসপিজিআরসির কেন্দ্রীয় নেতা খুরশীদ আলম মুন্না, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন রংপুর জেলা আহ্বায়ক সুরেশ বাসফোর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং রংপুর জেলার আহ্বায়ক সাজু বাসফোর প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ চক্রান্তের ফলে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন, ইয়েমেন, সুদানসহ বিশ্বের দেশে দেশে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ, নারী-শিশু প্রাণ হারাচ্ছে। এই যুদ্ধই আজকের দিনে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যেবাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। মানুষের বাঁচার প্রয়োজনীয় উপকরণ নয়, অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি এবং সেই অস্ত্র বিক্রি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা করছে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো। এভাবে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত এবং লাশের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা। 

তিনি আরও বলেন, বৈষম্য দূর হবে কীভাবে? জনগণের সংগ্রাম কি এভাবে বারে বারে ব্যর্থ হবে? না,১৯১৭ সালে সর্বহারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দেখিয়েছে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হয়। সর্বহারা শ্রেণি দেখিয়েছে শুধু শোষক বুর্জোয়া সরকারকে উচ্ছেদ করলেই হবে না, তার স্থলে ক্ষমতা দখল করতে হবে গরীব মেহনতি মানুষকেই। তারপর সেই শোষণমূলক বুর্জোয়া রাষ্ট্রকে উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএফ