বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১৭ জনের
ছয় জেলায় বজ্রপাতে মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার সময় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে নেত্রকোণার আটজন, কিশোরগঞ্জের একজন, সুনামগঞ্জের একজন, ময়মনসিংহের একজন, মানিকগঞ্জের দুইজন ও ফরিদপুরের চারজন রয়েছেন। ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নেত্রকোণা: নেত্রকোণার বিভিন্ন এলাকায় বজ্রপাতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও চারজন। এছাড়া বজ্রপাতে জেলার মদন উপজেলার শিবপাশা গ্রামের তপন চন্দ্র নামে এক কৃষকের দুটি গরুও মারা গেছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৮ মে) বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুজন জেলার কেন্দুয়া উপজেলার, তিনজন খালিয়াজুরী উপজেলার এবং দুইজন মদন উপজেলার বাসিন্দা।
নিহতরা হলেন- কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের কুন্ডুলী গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে কৃষক ফজলু মিয়া (৫৫), একই উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের বৈরাটি গ্রামের আসন খানের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (৪২), খালিয়াজুরী উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাতোয়াইল গ্রামের মঞ্জুরুল হকের ছেলে মনির হোসেন (৩০), মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের খেলু ফকিরের ছেলে অসেক মিয়া (৩৫), একই গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে বিপুল মিয়া (৩০) এবং মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ শরীফ (১৮) একই গ্রামের আব্দুল মন্নাফের ছেলে মাওলানা আতাউর রহমান (২১) ও পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পালগী গ্রামের ইছাক ফকিরের ছেলে জুনায়েদ মিয়া (১১)।
এ ছাড়া বজ্রপাতে আহতরা হলেন মদন উপজেলার পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের রবিন (১৫) রুমান (১৮) ও একই উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের ভিক্ষু মিয়ার স্ত্রী কণা (৪৫) এবং চন্দন মিয়ার স্ত্রী সুরমা আক্তার। আহতদেরকে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
কেন্দুয়া থানার ওসি কাজী শাহ নেওয়াজ, খালিয়াজুরী থানার ওসি মজিবুর রহমান, মদন থানার ওসি ফেরদৌস আলম ও পূর্বধলা থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বজ্রপাতে মো. আরিফুল ইসলাম (১৭) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের বেয়াতিরচর হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আরিফুল ইসলাম গুরুই ইউনিয়নের বেতি নয়াগাঁও এলাকার মিয়া চাঁনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে আরিফুল ইসলাম গুরুই ইউনিয়নের বিয়াতিরচর হাওর থেকে গরু আনতে যায়। এ সময় ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে আরিফুল গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা আরিফুলকে উদ্ধার করে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
গুরুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের ও নিকলী থানার ওসি শামছুল আলম সিদ্দিকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বজ্রপাতে আবু তাহের (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের তেগাঙ্গা গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেল ৩টার দিকে আবু তাহের নিজের বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঝোড়ো বাতাস ও প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলে তিনি সড়ক থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতর আশ্রয় নিতে দৌড় দেন। তখন আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি মো. নাজির আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে আতিকুল ইসলাম (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের খলিশাজান গ্রামের আজমত আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের খলিশাজান গ্রামের খোলা মাঠে কয়েকজন কিশোর ফুটবল খেলছিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে আতিকুল ইসলামসহ দুজন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর আতিকুল মারা যায়। আহত অপরজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।
তারাকান্দা থানার ওসি আবুল খায়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার পৌলি ও গিলন্ড গ্রামে পৃথক বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের মাসুদ মোল্লার ছেলে আসিফ মোল্লা (১৬) ও ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া গ্রামের শেখ মাঈনুদ্দিনের ছেলে আজমত আলী (৫০)।
আহতরা হলেন- গিলন্ড গ্রামের মৃত রশিদ মোল্লার ছেলে অনিক মোল্লা (১৫), মো. লেবু মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ (১৫), মো. বাবুল মোল্লার ছেলে পিয়াস (৮), মো. মোশারফের ছেলে শিহাব (১১) ও কুদ্দুসের ছেলে রিফাত (৯)।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বিকেলে বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত আজমত আলী দিনমজুর আর আসিফ স্কুলছাত্র। বজ্রপাতের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে অনিক মোল্লা ও আব্দুল্লাহ। এদের মধ্যে আব্দুল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনিককে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফরিদপুর: ফরিদপুরে দুই উপজেলায় বজ্রপাতে নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল, পৌরসভার পশ্চিম গঙ্গাবর্দী, মোল্লাডাঙ্গী মহল্লা ও মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে এ ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুর পৌরসভার মোল্লাডাঙ্গী মহল্লায় বজ্রপাতে আনোয়ারা বেগম (৩৮) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সময় ওই নারী স্বামী ও ছেলের সঙ্গে মাঠ থেকে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। আনোয়ারা বেগম মোল্লাডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা কৃষক কাবুল শেখের স্ত্রী।
অপরদিকে বজ্রপাতে মারা গেছেন কৃষক কবির মোল্লা (৪৮)। তিনি ফরিদপুর পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গঙ্গাবর্দী মহল্লার গোপাল মোল্লার ছেলে। ধান নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া বজ্রপাতে সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে মারা যান দুলাল খান (৫৮) নামে এক কৃষক। তিনি মাঠে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি এমএ জলিল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে মধুখালী উপজেলার চাঁদপুরে কবির শেখ (৪০) নামে এক কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন। মাঠে পাটক্ষেত পরিচর্যার সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. কবির সরদার জানান, উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা কবির শেখ বাড়ির পাশের একটি মাঠে কাজ করছিলেন। বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ বজ্রপাত হলে গুরুতর আহত হয়ে পড়েন তিনি। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আরএআর