জামিনে মুক্তির পর সাবেক এমপি রউফ জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুর রউফকে জেল গেটথেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তির পর অপর একটা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কুষ্টিয়া শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট আন্দোলনকারী বাবুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর আগে ১ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে র্যাব-১২ ও র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মিরপুর থেকে আব্দুর রউফকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলের দিকে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তার জামিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে জেলা জজ তার জামিন মঞ্জুর করেন। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে জয় পান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, আব্দুর রউফকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট আন্দোলনকারী বাবুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাইসুল হক বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী জনপ্রতিনিধিসহ মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০-৫০ জনকে।
নিহত বাবু কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের শালদহ এলাকার মৃত নওশের আলীর ছেলে। বাবু পেশায় স্বর্ণকার ছিলেন।
বাবু হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীকে। এছাড়াও এ মামলার কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম বাবুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী জনপ্রতিনিধিসহ আসামি হিসেবে মোট ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
স্বর্ণকার বাবু হত্যা মামলার বাদী রাইসুল হক এজাহারে উল্লেখ করেন, আমি কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে ডিগ্রি ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করি। গত ১৭ জুলাই থেকে আমি ও বাবুসহ অনেক লোকজন কোটাবিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্নস্থানে মিছিল করে আসছিলাম। ৫ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে বক চত্বরে অবস্থানকালে আসামিরা হাতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও ধারালো চাপাতি নিয়ে আমাদের পথরোধ করে। ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর আসামিরা হুকুম দেন যে, শালাদের খুন করে ফেল (আসামি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী)। হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে আসামিরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও ধারালো চাপাতি নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমাদেরকে ধাওয়া করে। তখন আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য ছয় রাস্তার দিকে দৌড় দেই।
৩টা ৫০ মিনিটের দিকে থানাপাড়ার আড়ংয়ের সামনে রাস্তার ওপর পৌঁছালে আসামিরা বাবুকে পেছন দিক থেকে ধারালো চাপাতি দিয়ে কাঁধের ওপর কোপ দিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এবং তাৎক্ষণিক সে রাস্তার ওপর পড়ে যায়। তখন ৫নং আসামি (কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী) বাবুকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো চাপাতি দিয়ে তার মাথার ডান পাশে একটি কোপ মেরে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
৭ নম্বর ও ৮ নম্বর আসামি (কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস) ধারালো চাকু দিয়ে ভিকটিম বাবুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। ১০ নম্বর আসামি (কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম) বাবুর ডান হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তার হাড়ভাঙ্গা জখম হয়। ১১, ১২, ১৩ নম্বর আসামি (মহিদুল কমিশনার, মাহাবুল ও কৌশিক কাউন্সিলর) বাবুকে এলোপাতাড়ি ধারালো চাপাতি ও চাকু দিয়ে আঘাত করলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম প্রাপ্ত হয়। অন্যান্য আসামিরা এলোপাতাড়ি বাবুকে মারপিট করিয়া জখম করে। আমরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ৬ নম্বর ও ৯ নম্বর আসামি (হাসিব কুরাইশি ও হাবিবুর রহমান হাবি) আমাদের দিকে লক্ষ্য করে পিস্তল দিয়ে গুলি করে এবং সামনে এগিয়ে আসলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বাবু নিস্তেজ হয়ে গেলে আসামিরা উল্লাস করতে করতে বক চত্বরের দিকে চলে যায়। তখন আমরা ভিকটিম বাবুকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাজু আহমেদ/আরএআর