ফিলিং স্টেশনে এখনো নির্গত হচ্ছে গ্যাস, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে গ্যাস লিকেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত তিনজনের পরিবারে বইছে শোকের মাতম। দুর্ঘটনা কবলিত স্টেশনে থাকা এলপিজির ট্রাক লরি থেকে এখনো গ্যাস নির্গত হওয়ায় পুরো এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ফলে ওই সড়কে বন্ধ রয়েছে জনসাধারণসহ সব ধরনের যান চলাচল।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফিলিং স্টেশনের ৫০০ মিটার এলাকায় যানবাহন ও মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সোমবার রাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সংশ্লিষ্ট সড়কের দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। এ ঘটনার সঠিক কারণ চিহ্নিত করে প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ সচেতন মহলে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন প্রাইভেটকার চালক সদর উপজেলার কিসমত গ্রামের বাসিন্দা হিমেল আহমেদ। তিনি দুর্ঘটনার সময় প্রাইভেটকারে গ্যাস নিচ্ছিলেন। ফলে অগ্নিকাণ্ডে প্রাইভেটকারের ভেতরেই তার দেহ দগ্ধ হয়ে যায়। তার পরিবারে রয়েছে দশ বছর বয়সী একটি মেয়ে, স্ত্রী, মা ও ছোট ভাই। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
নিহত হিমেলের মামা সাজ্জাদ হোসেন খান মিলন বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিচার চাই।
নিহত দ্বিতীয় ব্যক্তি কিসমত গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কদ্দুস (৮৫)। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি জীবিকার জন্য ভাঙগারি কুড়িয়ে ও মানুষের কাছ হাত পেতে চলতেন। ঘটনার সময় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে হোটেলে ভাত খেয়ে ফিলিং স্টেশনের পাশের একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডে তার শরীরের আগুন ধরে গেলে দৌড়ে শরীরের আগুন নিভিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। পরে তার স্বজনরা গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আরও পড়ুন
নিহত কদ্দুসের মেয়ে ময়না আক্তার (৩৭) বলেন, আমার বাবা শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। আমি আমার বাবার মৃত্যুতে জড়িতদের বিচার চাই।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তৃতীয় ব্যক্তি নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের হারগুজিরপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত মনসুর হোসেনের ছেলে আবুল হাসেম (৪৫)। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন মুদি দোকানি।
নিহত আবুল হাসেমের ছোট ভাই মিয়া হোসেন বলেন, আমার ভাই তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে।
এছাড়া ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী তোফাজ্জল হোসেনসহ আরও ৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
যা বলছে জেলা প্রশাসন
ঘটনার বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এখানে এক ধরনের গাফিলতি রয়েছে। এ কারণেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্মদিবস পর কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিতাস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
মঙ্গলবার দুপুরে তিতাস গ্যাস ময়মনসিংহের ডিজিএম সুরঞ্জিত কুমার দে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি পুরো এলাকা ঘুরে দেখে বলেন, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত আমাদের একটি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। আমরা সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেব। আমরা এখানে আমাদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তবে এই ফিলিং স্টেশনে তিতাস গ্যাস ছাড়াও এলপিজি ও পেট্রোলিয়াম ছিল।
পলাতক মালিক
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম খান বলেন, ঘটনার পর থেকে পাম্পের মালিক আজাহারুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ময়নাতদন্ত শেষে দুজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে অপর একজনের মরদেহ স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই বাড়িতে নিয়ে দাফন করেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে ময়মনসিংহ নগরের রহমতপুর বাইপাস এলাকায় আজহার ফিলিং স্টেশনে হঠাৎ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ৭টি গাড়ি ভস্মিভূত হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি প্রাইভেকটার, তিনটি সিএনজিসহ অন্যান্য গাড়ি রয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটের টানা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরকে