বিএনপির দুপক্ষের উত্তেজনা থামলো পুলিশ-সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে
জয়পুরহাটের কালাইয়ে বিএনপির দুইপক্ষের মিছিলকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় প্রশাসন-পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রোববার (৩ নভেম্বর) বিকেলে কালাই উপজেলার বাসস্যান্ড এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর জয়পুরহাট সদর ও পৌর বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের ভোট হয়। এতে জয়পুরহাট সদর উপজেলা শাখার সভাপতি পদে হেনা কবির ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু বক্কর সিদ্দিক নির্বাচিত হন। আর শহর বিএনপির সভাপতি পদে অধ্যাপক আমিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু রায়হান উজ্জ্বল প্রধান নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন
এ ছাড়া একইসঙ্গে সদর উপজেলা ও শহর শাখার দুজন করে মোট চারজন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। সদর থানা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পক্ষে-বিপক্ষে আনন্দ ও প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে কালাইয়ে বিএনপির বিবদমান দুটি পক্ষে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
একপক্ষে নেতৃত্ব দেন কালাই থানা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন। তিনি জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেন গ্রুপের সমর্থক। আর অপরপক্ষে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার। তিনি জয়পুরহাট শহর বিএনপির আহ্বায়ক মতিয়র রহমান গ্রুপের সমর্থক।
কমিটিতে দলটির মতিয়র রহমান পক্ষের নেতাদের কাউকে কাউন্সিলে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এরই প্রতিবাদে কালাইয়ে দলটির ওই পক্ষের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে শনিবার বিকেলে জেলার কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আনিসুর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
একই উদ্দেশ্যে রোববার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করার জন্য বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মতিয়র রহমান পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হচ্ছিল।
অন্যদিকে কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে বিজয়ীদের সমর্থনে আনন্দ মিছিলের জন্য জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন গ্রুপের সমর্থকরা জড়ো হতে থাকে। এসময় দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়ে উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এসময় কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিতি হন। এরপর তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতির কথা অস্বীকার করে জানান, বরাবরের মতো রোববার দুপুরে কালাই তুলাপট্টি এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন তিনি। তারসঙ্গে আরও নেতাকর্মীরা সেখানে আসেন। পরে সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়।
জেলা বিএনপির সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার জানান, জয়পুরহাট সদর থানা ও পৌর বিএনপির একতরফা নতুন কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার সন্ধ্যায় তাদের মশাল মিছিল হওয়ার কথা ছিল। সেজন্য কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হচ্ছিল। কিন্তু তাদের সেই কর্মসূচি বানচাল করতে ইব্রাহিম হোসেন তার লোকজনকে তুলাপট্টি এলাকায় সমবেত করে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে কালাইয়ের ইউএনও শামীমা আক্তার জাহান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দুপক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলি। এরপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কালাই পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপির দুপক্ষের মিছিলকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এখন তা স্বাভাবিক রয়েছে।
চম্পক কুমার/এমএসএ