রংপুরে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে গণঅধিকার পরিষদ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে আলটিমেটাম দিয়েছেন দলটির নেতারা। অন্যথায় রংপুরসহ সারা দেশে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।

রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন জাতীয় পার্টির নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আলটিমেটাম দেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য মো. হানিফ খান সজীব। এ সময় কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ রানা মোন্নাফসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে হানিফ খান সজীব বলেন, রংপুরে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের করা একটি বিক্ষোভ মিছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যেখানে তারুণ্যের আইকন ফ্যাসিবাদ পতনের অন্যতম রূপকার ডাকসুর সাবেক ভিপি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও গণঅধিকার পরিষদের সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে ভাষায় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও কটূক্তিমূলক স্লোগানসহ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার হালুয়া-রুটির সহযোগী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের এমন অসভ্য আচরণ ও জঘন্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় নীলনকশায় দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ কায়েমে বিগত তিনটি নির্বাচনেই সহযোগী ছিল জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ এর আগেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়েও এ ধরনের করুচিপূর্ণ ও কটূক্তিমূলক অসভ্য আচরণ করেছিল। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে শান্তিপ্রিয় রংপুরের আঞ্চলিক শান্তি ও সহনশীলতার স্বার্থে ভিন্নমতের রাজনীতির প্রশ্নে আমরা উদারতা দেখালে জাতীয় পার্টি হয়তো সেটিকে দুর্বলতা ভাবছে।

হানিফ খান সজীব বলেন, জাতীয় পার্টির মিছিল থেকে যারা জুলাই-বিপ্লবের সংগ্রামী সহযোদ্ধা, সময়ের সাহসী নেতৃত্ব, ডাকসুর জনপ্রিয় ভিপি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও গণঅধিকার পরিষদ নিয়ে কটূক্তি করে বাজে স্লোগান দিয়েছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করলে রংপুরসহ সারা দেশে তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুরে জাতীয় পার্টির স্থান হবে না—এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির লাগামহীন পাগলা নেতাকর্মীদের আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, জুলাই-বিপ্লবের শহীদ আবু সাঈদের রক্তস্নাত রংপুরের মাটিতে গণহত্যাকারী খুনি ফ্যাসিস্ট ও তার সহযোগীদের রাজনীতির স্থান হবে না। কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন যদি ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনে রংপুরকে অশান্ত ও উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে রংপুরের বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। একইসঙ্গে দেশে স্থিতিশীলতা আনায়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের আস্ফালন বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় এ নেতা।

এদিকে ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে শনিবার (২ নভেম্বর) রংপুর মহানগরীতে লাঠি মিছিল বের করে পার্টির নেতাকর্মীরা। পরে পায়রা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে থেকে এ ঘটনার জন্য গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে দায়ী করে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা।

সমাবেশে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ভিপি নুরের গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে গোটা দেশে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আমরা ইসরায়েলের টাকায় চলা গণঅধিকার পরিষদকে হিসাব করি না। কিন্তু জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সাবেক সিটি মেয়র মোস্তফা আরও বলেন, একটি গোষ্ঠী ভিপি নুর, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুলাহকে ব্যবহার করে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আমি ভিপি নুরসহ অন্যদের হুঁশিয়ারি দিতে চাই। রাজপথে দেখা হবে, স্লোগান হবে, রাজপথে রক্ত যাবে, রাজপথে মিছিল হবে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রস্তুত আছি ও থাকবো।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে