১৯৯০ সালে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় হাজিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে যাত্রা শুরু হয় সাধন চন্দ্র মজুমদারের। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের হাত ধরে কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পা রাখেন।

এরপর জেলা আওয়ামী লীগের দুইবার প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দীর্ঘদিন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ধীরে ধীরে দলে শক্ত ভিত তৈরি করেন। আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নওগাঁ-১ (সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। পূর্ণ মেয়াদে একবার খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আবারও খাদ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সাধন চন্দ্র।

গত ৯ অক্টোবর রাতে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর গত দেড় দশকে নওগাঁর সর্বত্র প্রভাবক হয়ে ওঠার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সাধন চন্দ্রের বিরুদ্ধে।

সাধন চন্দ্রের ‘দাদা লীগ’

নওগাঁয় ‘দাদা লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে হাজারো তৃণমূলের নেতাকর্মীকে বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন থেকে জেলা কমিটি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের কোন পদে কাকে বসাবেন, তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের দাপুটে এই নেতা। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকায় অযোগ্য প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ রয়েছে সাধন চন্দ্রের বিরুদ্ধে। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।

তাদের মধ্যে একজন নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান তোতা। তিনি বলেন, সাধন চন্দ্রের দাপটে গত দেড় দশক স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা ছিল। এই দাদা লীগের সিন্ডিকেট ভাঙতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে ভোট ডাকাতি করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয় সাধন। প্রার্থী হওয়ার অপরাধে আমি ও আমার নেতাকর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলা ও নির্যাতন করা হয়েছে। একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে।

খালেকুজ্জামান তোতা আরও বলেন, সাধন চন্দ্রের আস্থাভাজন না হলে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটিতেও পদ জুটত না। নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম জামাইকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। বড় মেয়েকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং ছোট মেয়েকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বানিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করে কয়েকশ কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি।

চেম্বার অব কমার্স যেন ‘চেম্বার অব সাধন’

ব্যবসায়ীদের সংগঠন চেম্বার অব কমার্সকে চেম্বার অব সাধনে পরিণত করেছিলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার ও নিজ ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ায় ইথেন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলকে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বার বার নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি পদে বসাতেন তিনি। ঠিকাদার রাসেলের মাধ্যমে চেম্বার ভবনে আয়েশের জন্য আলাদা কক্ষ বানিয়ে নিয়েছিলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির পাশাপাশি সাধন চন্দ্র মজুমদার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপিদের ছবি টানানো থাকতো। ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলকে চেম্বারের সভাপতি বানিয়ে নির্বাচনের সময়গুলোতে নির্বাচনী ব্যয়ের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা আদায় করাতেন সাধন চন্দ্র।

এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে চেম্বারের পরিচালক পদ হারাতে হয়েছিল ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলামকে। তিনি বলেন, চেম্বারের পরিচালকদের কেউ সাধন চন্দ্রের অবৈধ হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করলে কোনো নোটিশ ছাড়াই তাকে সরিয়ে দিতেন ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। পরবর্তীতে চেম্বার ভবনে প্রবেশ করতেও দেওয়া হতো না। এক্ষেত্রে রাসেল তার সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করতো। প্রতিবাদ করতে গিয়ে চেম্বারের পরিচালক পদের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকেও আমাকে বাদ দিয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।

মৎস্যজীবী ও মৎস্য চাষিদের জলাশয়ে থাবা

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের বঞ্চিত করে নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি জলাশয় নামমাত্র টাকায় ইজারা নিতেন সাধন চন্দ্রের ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার। এলাকায় তিনি ‘মোনা দা’ নামে পরিচিত। মনোরঞ্জন মজুমদার তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অনেকের ব্যক্তি মালিকানাধীন জলাশয়ও জোরপূর্বক দখলে নিতেন। শত শত বিঘা জলাশয় দখলে নিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মাছ চাষ করেছেন তিনি। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছিল স্থানীয় মৎস্য চাষি ও মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা। এই দখলদারিত্বে ছোট ভাইকে সব সময় সহযোগিতা করে এসেছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।

নিয়ামতপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা হাকিম মন্ডল বলেন, সাধন চন্দ্রের ভাই মনোরঞ্চন মজুমদার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমার একটি পুকুর দখল করে নিয়েছিলেন। স্থানীয় থানা পুলিশ ও আদালতে বছরের পর বছর ঘুরেও প্রতিকার পাইনি। তাদের ক্যাডার বাহিনী সব সময় আমাদের চাপের ওপর রাখতো। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পুকুরে দীর্ঘ ১৫ বছর ওরা আমাদের যেতে দেয়নি।

সরকারি প্রকল্পে সাধনের কমিশন বাণিজ্য

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যত কাজ হতো এর প্রায় বেশিরভাগই সাধন চন্দ্রের ব্যবসায়িক পার্টনার ইথেন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলকে দিতে হতো। রাসেল ছাড়া ভুলক্রমেও বড় কাজগুলো অন্য কেউ পেলে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বাধ্য করা হতো কার্যাদেশ আটকে রাখার। এর একটু এদিক সেদিক হলেই ঢাকা থেকে সাধন চন্দ্র মজুমদার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে সরাসরি কল দিয়ে হুমকি দিতেন। এভাবে এলজিইডিকে প্রভাবিত করে গত দেড় দশকে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।

এলজিইডির তালিকাভুক্ত ঠিকাদার ফরিদ হোসেন বলেন, ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলকে সকাল-সন্ধ্যা ভক্তি করে চলতেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ। নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে এসে প্রকাশ্যে অন্য সব ঠিকাদারদের হুমকি দিতেন রাসেল। লটারিতে আমি কাজ পাওয়ার পরও সেই কাজের কার্যাদেশ অবৈধভাবে আটকে রেখেছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো আমাদেরই কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেওয়া হতো। গত দেড় দশকে ইথেন এন্টারপ্রাইজের মতো নিম্নমানের কাজ আর কেউ করেনি। যেখানে শত শত কোটি টাকা লুট করে খেয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।

সরদার সাইফুল ইসলাম সাজু নামে আরেক ঠিকাদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সওজ, এলজিইডি, গণপূর্ত বিভাগসহ নওগাঁর প্রতিটা দপ্তরে বড় বাজেটের দরপত্রে সাধন চন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল, আলী আকবর ও মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া অন্য কেউ অংশগ্রহণের সুযোগ পেতেন না। যারা কাজ পেতেন তাদের প্রত্যেকে প্রকল্পের মোট বরাদ্দের ১০-১৫ শতাংশ টাকা কমিশন হিসেবে সাধন চন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিতে হতো। এসব টাকা গ্রহণ করতেন তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল ও মুসলিম জামাতা নাসিম আহমেদ।

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলের নীতিমালা অনুযায়ী দরপত্রের সবকিছুই অনলাইনে হয়। তাই সেখানে কারসাজি বা প্রভাব খাটানোর কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলের লাইসেন্স শক্তিশালী, তাই তিনি স্বাভাবিকভাবেই বেশি কাজ পেয়েছেন। সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি কখনো কাজ করেননি বলেও দাবি করেন।

ক্রীড়াঙ্গনেও লুটপাট 

সাধন চন্দ্র মজুমদার প্রভাব খাটিয়ে দুই বছর আগে তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলকে বানিয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। এরপর থেকেই সাধন চন্দ্রের দখলে ছিল জেলার ক্রীড়াঙ্গন। স্টেডিয়াম সংস্কারসহ খেলাধুলার আয়োজনের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। এর বড় একটি ভাগ পেতেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পুরো কমিটিকে ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ছাড়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীতে ভর্তি রেখেছিলেন সাধন চন্দ্র। যার ফলে আওয়ামী পরিবার ছাড়া অন্য দলের মতাদর্শের কোনো খেলোয়াড়কে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দিতেন না বর্তমান ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দ। 

জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়ার এনামুল হক বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় গত দেড় দশক নওগাঁ স্টেডিয়ামের কোনো টুর্নামেন্টে আমাকে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। সাধন চন্দ্র মজুমদার ও ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে ধারা ভাষ্যকারদের কাউকে আমার নাম উচ্চারণ করতে দিত না। এখান থেকে খেলাধুলার পরিবেশ পুরোটাই নষ্ট করে দিয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী। স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক লুটপাতে ব্যস্ত ছিল সাধনের ক্রীড়া সংস্থার কমিটির নেতারা।

চালের বাজারে প্রভাবক হয়ে উঠেছিলেন সাধন চন্দ্র

ধান-চালের বৃহত্তর মোকাম হিসেবে সারাদেশেই পরিচিত উত্তরের জেলা নওগাঁ। এ জেলারই সংসদ সদস্য ছিলেন সাড়ে ৫ বছর খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা সাধন চন্দ্র মজুমদার। তার আমলেই সবচেয়ে বেশি হেরফের হয়েছে দেশীয় চালের বাজারে। মজুত নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশীয় চালের বাজারে সাধন চন্দ্রের সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে ওঠার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইচ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কখনোই মূল ধারার মিলারদের পরামর্শ নিতেন না সাধন চন্দ্র মজুমদার। ধান-চাল সংশ্লিষ্টদের বাইরের কিছু লোকেদের পরামর্শে মাঝে মধ্যেই অযৌক্তিক পদক্ষেপ নিতেন তিনি। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো ভোক্তাদের। সাধন চন্দ্র নিজের আখের গুছিয়ে মিলারদের একের পর এক হয়রানি করে পুরো চালকল শিল্পটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যার ফলে এখন শুধু হাসকিং মিল নয়, অটোমেটিক রাইচ মিলের বেশিরভাগ মিলাররাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

অবৈধ সম্পদের পাহাড়

সংসদ সদস্য হওয়ার আগে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদারের ২০০৮ সালে সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। ওই সময়ে প্রতি বছরে তার আয় ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য ও এক মেয়াদে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধন চন্দ্রের দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা। বার্ষিক আয় ঠেকেছে ৪ কোটি টাকার কাছাকাছি। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সম্পদ বেড়েছে ৯৮ গুণ। আর বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৫৭ গুণেরও বেশি। 

হলফনামার বাইরেও ভারতের দিল্লি ও কলকাতা এবং অস্ট্রেলিয়ায় ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদারের নামে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে সাধন চন্দ্রের- এমন তথ্য গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। হাসিনা সরকার পতনের দিন নওগাঁ শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার সাধন চন্দ্রের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নওগাঁ জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন সংসদ সদস্য লাখপতি থেকে ১৫ বছরে কীভাবে শত কোটি টাকার মালিক হয় সেটা সকলেরই জানা। নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহারে সকল নাগরিক সুবিধা পেতে জনগণকে সাধন চন্দ্রের ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার ওরফে মোনা দার শরণাপন্ন হতে হতো। তার মাধ্যমে মজুমদার পরিবার শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও বিষয়টি জানতেন। অথচ তার বিরুদ্ধে সরকার কখনোই ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো তাকে দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এসব অনিয়ম নিয়ে যাতে কেউ সংবাদ প্রকাশ করতে না পারেন সেটি নিশ্চিত করতে কিছু সাংবাদিককে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে পুরো জেলা প্রেসক্লাব দখলে রেখেছিলেন তিনি। প্রশাসন এখনো তদন্ত করলে সাধনের শত শত কোটি টাকা অবৈধ আয়ের প্রমাণ পাবে।

আরএআর