মাল্টা চাষে ফাহিমের সাফল্য, ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন উদ্যোক্তা হবেন। একদিন এক শিক্ষকের বাসার ছাদে মাল্টা চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন। করোনা মহামারির মধ্যে যখন বাড়িতেই থাকতে হচ্ছিল, তখন শুরু করেন মাল্টা চাষ। ফলনের প্রথম বছরে সফলতা ধরা না দিলেও হতাশ হননি। চলতি মৌসুমে ১০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তরুণ উদ্যোক্তা ফারাদুজ্জামান ফাহিমের কথা। মাল্টা চাষে বাজিমাত করেছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি চারজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ফারাদুজ্জামান ফাহিমের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের মির্জাগঞ্জ গ্রামে। গ্রামের মির্জাগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। এখন তিনি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত।
ফাহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে সাড়ে তিন একর জমিতে ৯২০টি মাল্টা ও ৪০টি কমলার চারা রোপণ করেন। রোপণের দ্বিতীয় বছর আশানুরূপ ফলন না পেলেও হতাশ হননি তিনি। ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন ফলনের প্রথম বছরে। তবে চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে এবং ভালো ফলন হওয়ায় ১০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানান তরুণ এই উদ্যোক্তা। চলতি বছরে ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন ফাহিম। এ মাল্টা সহজলভ্য হওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে জানান তিনি।
ফারাদুজ্জান ফাহিম নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান। তার মাল্টা বাগানে চারজন শ্রমিক প্রতিনিয়ত বাগান দেখাশোনা ও পরিচর্যার কাজে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়াও মৎস্য খামার এবং মাঠ ফসলের বিভিন্ন প্রজেক্টে ১০ জনের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তবে সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা এবং সুযোগ-সুবিধা পেলে কৃষিতে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২১ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড পাবলিক কলেজে পড়াশোনার সময় এক শিক্ষকের ছাদ বাগানে মাল্টা চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই, পরে সশরীরে বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করি এবং স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শক্রমে বাগান স্থাপন করি।
রোপণের দ্বিতীয় বছরে বাগানে সেভাবে ফলন না হলেও হতাশ হয়নি। এ বছর ইতোমধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি এবং আরও ৬-৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
বাগানে পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত মহির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সব সময় বাগানে থাকি, বাগান দেখাশুনা করি। যদি কোনো গাছে সমস্যা দেখা দেয় ফাহিম যদি বাইরে থাকে তাহলে তাকে ফোন করে জানাই। যদি মুখের কথায় সেটা বুজতে না পারে তাহলে ছবি তুলে পাঠানো হয়। এরপর সে সেখান থেকে ফোনে জানিয়ে দেয় কি কি করতে হবে আমাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফাহিম যখন শুরু করে আমরা মনে করেছি লেবুর বাগান করবে। এরপর যখন জানতে পারি, মাল্টা বাগান করবে আমরা ভেবেছিলাম ছোট একটা ছেলে সে কি পারবে করতে। আর আমরা জানি আমাদের এলাকায় তো এসব হয়ও না। কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখে আমরা অবাক, এই এলাকায় এত সুন্দর মাল্টা চাষ আমরা ভাবতেও পারি না।
ফাহিমের বাগান ঘুরতে এসে অভিভূত হন তার স্কুল শিক্ষক দুলাল উদ্দিন। এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফাহিমের মাল্টা বাগানে গিয়ে আমি সত্যি অভিভূত হয়েছি। ৯ বিঘা জমির ওপর অসাধারণ এক মাল্টা বাগান করেছে ফাহিম। মাল্টা গাছগুলো দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছিল। ফাহিম পরিশ্রমী একটা ছেলে। ছাত্রজীবনে পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি সে বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে যা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে পাশাপাশি গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকারত্ব কমিয়ে নিয়ে আসবে—যা আসলেই প্রশংসার দাবিদার। সবাই যদি ফাহিমের মতো এমন আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাহলে দেশে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে আসবে।
ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফাহিম এই উপজেলার একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় তিন একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তার বাগানে প্রায় ১০০০টি বারি মাল্টা-১ জাতের গাছ এবং ১৫০টির মতো কমলার গাছ আছে। এ বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও তাকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করেন। এ ছাড়া আমরা প্রায়ই তার বাগান পরিদর্শন করি। আমরা আশা করি, ফাহিমের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই বদলে যাবে দেশের কৃষি কার্যক্রম।
শরিফুল ইসলাম/এএমকে