জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী কলেজ বাজারের দলীয় বিএনপির কার্যালয় এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আহতরা হলেন- আক্কেলপুর পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিন, সদস্য আনিছুর রহমান, আলম হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা বিএনপির সদস্য আমিনুর রশিদ ইকু, জুলফিকার আলী শ্যামল, মিনা হোসেন, রবিন হোসেন, সোহেল রানা ও মামুনুর রহমান। তাদের মধ্য জুলফিকার আলী শ্যামলকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় পৌর বিএনপি। একতরফা ও অগঠনতান্ত্রিক পন্থায় ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের আয়োজনের অভিযোগ তুলে দলটির একটি পক্ষ প্রতিবাদ করে। গত ১৭ অক্টোবর প্রথম দিনে রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলন ঘোষণা করে পৌর বিএনপি। একই দিনে ও একই সময় রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পাল্টা প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয় অপর পক্ষ। আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করায় দলটির কোনো পক্ষই পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

পরে পৌর বিএনপি স্থানীয় সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলন করে ওই তিনটি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার পৌরসভার আরও তিনটি ওয়ার্ডের সম্মেলন চকেশা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে করার ঘোষণা করে পৌর বিএনপি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে স্থান পরিবর্তন করে কলেজ বাজারের কাঁচা বাজারের দলীয় কার্যালয়ে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। এরপর এদিন বিকেল ৪টায় দলীয় কার্যালয়ে সম্মেলন শুরু হয়।

তখন দলটির অন্য পক্ষের নেতাকর্মীরা তাতে বাঁধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্য ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। পরে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানার নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আক্কেলপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর চৌধুরী বাদশা বলেন, আজ বিকেলে পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ এই ওয়ার্ডের কাউন্সিল দলীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। হঠাৎ করে বিকেল ৪টার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে তিনটি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করেছি। যারা হামলা করেছে তাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই, তারা সন্ত্রাসী। আমরা এর বিচার দাবি করছি।

পৌর পৌর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মামুনর রহমান মামুন বলেন, আক্কেলপুর পৌর বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ রেখে সুযোগ সন্ধানী ও যারা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছিল তাদের নিয়ে আজ একতরফাভাবে কমিটি ঘোষণার পাঁয়তারা করছিল। আমরা তাতে বাঁধা দিয়েছি। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর চৌধুরীর নেতৃত্বে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। এতে আমিসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন করে কমিটি গঠন করার দাবি করেছিলাম। কিন্তু তারা সেটি না করে ঘরোয়াভাবে পকেট কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা সুলতানা বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টিম নিয়ে উপস্থিত হওয়ার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। কোনো পক্ষ এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করেনি।

চম্পক কুমার/এফআরএস