বরিশালে পলিসি ডায়ালগে বক্তারা
সবকিছু পুনর্গঠন করতে হলে সবার আগে জাতিগত উন্নয়ন দরকার
সবকিছু পুনর্গঠন করতে হলে সবার আগে জাতিগত উন্নয়ন দরকার বলে মনে করেন বরিশালে আয়োজিত এক নীতি আলোচনার বক্তারা। তারা বলেন, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ না করলে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। একনিষ্ঠভাবে প্রতিটি সেক্টরে যেমন কাজ করতে হবে তেমনি নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে সমন্বিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তরুণদের মধ্যে প্রবল পজিটিভ চিন্তাচেতনা রয়েছে। এই চিন্তাচেতনাকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে আমরা জিততে চাই। জিততে হলে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, আমাদের জানতে হবে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বরিশালের হোটেল গ্র্যান্ড পার্কে ‘দেশ গঠনে তারুণ্যের ভূমিকা’ শীর্ষক নীতি আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের আওতায় এই নীতি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরা আক্তার বলেন, তরুণদের সবসময় সবকিছুতে পজিটিভ চিন্তা-চেতনা। তারপরও বিভিন্ন বিষয়ে অসংগতি থেকেই যায়। আজকে চিকিৎসাখাত, জলবায়ু-পরিবেশ, উদ্যোক্তা, লিঙ্গ বৈষম্য, সুযোগ-সুবিধা, গবেষণা নিয়ে আলোচনা হলো।
উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে খুব কম কথা বলেন। তারা হয়ত ভাবেন এসব রোগী বুঝবে না। কিন্তু রোগীর কী সমস্যা সেটি রোগীই জানেন না। অথচ এখন অনেক তরুণ রয়েছেন সব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে উত্তরণ করতে হলে জাতিগত উন্নয়ন করতে হবে আগে।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান তরুণসমাজ নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। আজকের আলোচনায় অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন তাদের ভাবনাগুলো। যে ভাবনাগুলো শুধু বরিশালের তরুণদের মধ্যেই প্রতীয়মান নয় সারা বাংলাদেশেই দেখা যায় তরুণরা দেশের জন্য চিন্তা করছে। এই সুন্দর সুন্দর নাগরিক ভাবনা ও আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করতে হলে শুধু রাষ্ট্রকে বা শুধু নাগরিকদের এগিয়ে আসলেই চলবে না, সমন্বিতভাবে সকলকে এগিয়ে এসে ভাবনাগুলো বাস্তবায়নের পথ সুগম করতে হবে।
সেন্টার ফর ক্লাইমেট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা নাহিন রেজওয়ান আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশে স্কিল ডেভেলপমেন্ট খুব কম। বিদেশে যখন আমি গবেষণার কাজে ছিলাম তখন দেখেছি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাইকেলের গ্যারেজে নিজের সাইকেল সারছেন। এটি তার দক্ষতা। অথচ বাংলাদেশে আমরা নিজের সাইকেল নিজে মেরামত করার কথা চিন্তাও করতে পারি না। উন্নত দেশে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা হয়। কারণ গবেষণা হলেই বিষয় সর্ম্পকে জানবে আর নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশেও এভাবে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
লিঙ্গ সমতা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সহচরীর প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা ফেরদৌস বলেন, আমরা নারীর অধিকারের কথা বলি কিন্তু তার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করি না। বাস্তবতায় একটি বাসে একজন নারী উঠলে তার জন্য অনেক সময় পুরুষ লোকটি আসন খালি করে বসার সুযোগ করে দেন কিন্তু কোনো নারী আসন ছেড়ে বসার সুযোগ করে দেন বলে মনে হয় না। অর্থাৎ নারী আর পুরুষের আগে ভাবতে হবে আমরা মানুষ। একজন মানুষ হিসেবে পরস্পরকে সহায়তা, সম্প্রীতি দেখালেই বৈষম্য নিরোধ হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক দিপু হাফিজুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, আজকের উপস্থিত তরুণদের নাগরিক ভাবনাই আগামীর দেশ গঠনে সহায়তা করবে। সকলের স্বতন্ত্র চিন্তা একদিন জিতিয়ে দেবে। আর এর মাধ্যমেই জিতে যাবে দেশ।
ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নাগরিক প্রত্যাশা তুলে ধরতে সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আলোচনা, নাট্য প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পরিচালিত করছে। এ ছাড়া ক্যাম্পেইনটির আওতায় amiojittechai.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রহণ করা হচ্ছে নাগরিকদের দাবি ও মতামত।
অনুষ্ঠানে নীতি আলোচনা ছাড়াও ইন্টারেক্টিভ থিয়েটার, কুইজ ও ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতা এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা সমকালীন বিভিন্ন ইস্যুর সমাধান বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন কেন্দ্রীয় পর্ষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শুভঙ্কর চক্রবর্তী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বরিশাল ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আওলাদ খান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লাল-সবুজ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা তাহসিন উদ্দিন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংগঠন মানবী’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সাবিহা রহমান রূপন্তী।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ