সারা দেশের মতো গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) বা জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকার কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার (২৮ অক্টোবর) তৃতীয় দিনের মতো সকাল ১০ থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার মনোহরপুর পুকুরিয়া দাখিল মাদরাসার মেয়েদের এই টিকা দেওয়া হয়।

টিকা দেওয়া শুরুর দুই ঘণ্টায় প্রায় শতাধিক মেয়ের টিকা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার পর ম্যাশ হিটেরিয়ায় প্রায় ২৬ জন মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ২৩ জনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়।

মনোহরপুর পুকুরিয়া দাখিল মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল—সুর্বনা (১৪), মিম খাতুন (১১), রিমি খাতুন (১২), যুথী খাতুন (১৫), মুন্নি খাতুন (১৫), তারিন সুলতানা (১৫), ফারিয়া খাতুন (১৪), লামিয়া (১২), শিমু খাতুন (১৪), তুলি (১৪), সোনালি (১৪), সীমা (১৪), রুমি (১৪) ও জিনিয়াসহ (১৩) মোট ২৬ জন।

মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মো. মমিনুর রহামন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল ১০ থেকে মাদরাসাতে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ করে একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে প্রাথমিকভাবে মাদরাসায় সেবা দেওয়ার পর সুস্থ হয়। কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন শ্রেণির মেয়েরা অসুস্থ হতে শুরু করে। একে একে প্রায় ২৩ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। টিকাদান টিমের সহকারীরা হাসপাতালে খবর দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাদরাসায় এসে তাদের হাসপাতালে নেন এবং চিকিৎসা দেন।

মাদরাসার সুপার মাওলানা ইউনুছ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে হাসপাতাল থেকে চারজনের একটি টিম মাদরাসার মেয়েদেরও টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করে। প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে ষষ্ঠ শ্রেণির এক মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ পর একে একে মোট ২৬ জনের মতো মেয়ে অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন তিনি নিজেই মাদরাসাতে আসেন। বেশি গুরুত্বপূর্ণ যারা তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান এবং বাকিদের মাদরাসাতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

তিনি আরও বলেন, ২৬ জনের মধ্যে তিনজন সুস্থই ছিল, পরে সবার দেখাদেখি ওই তিনজন মেয়েকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সবাই হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে চলে আসার পর তুলি নামে এক মেয়ে বাড়িতে গিয়ে গোসল করে খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা সবাই সুস্থ আছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ার খবর শুনে আমি নিজেই সেখানে যাই। এটাকে ম্যাশ হিসটেরিয়া বা দেখাদেখি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া বলে। যে-সব বাচ্চা অসুস্থ হয়েছে অধিকাংশয় সকালে না খাওয়া ছিল। পরবর্তীতে আমি না খাওয়া বাচ্চাদের টিকা দিতে নিষেধ করি এবং অসুস্থ বাচ্চাদের আমি আমার গাড়িতে এবং হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কারো স্যালাইন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে সুস্থ হাওয়ার পর বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। একটি মেয়ে বাড়িতে যাবার পর আবারো হাসাপাতালে আসছে, বাকিরা সবাই এখন ভালো আছে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/এএমকে