ভাগ্য পরিবর্তনে জন্য বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলমের হাত ধরে এক বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পাড়ি জমিয়েছিলেন মো. ইয়াসিন (২৫)। বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ইয়াসিন ও তার ভাই জাহাঙ্গীর আবুধাবিতে মিছিল করেছিলেন। সে সময় ইয়াসিন পালিয়ে থাকলেও জাহাঙ্গীরকে ৪৬ দিন কারাবরণ করতে হয়। 

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সব প্রবাসীদের ক্ষমা করে দেন আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। কিন্তু গত ২১ অক্টোবর মো. ইয়াসিন দুবাই বিমানবন্দর থেকে আটক হয়ে নিখোঁজ হন ইয়াছিন। টিকিট কেটেও ফিরতে পারেননি বাড়ি এদিকে ইয়াসিনের সন্ধান পেতে বাড়িতে অঝোরে কাঁদছেন তার মা-বাবা।

মো. ইয়াসিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর জাহাজমারা গ্রামের বাবুল মাঝিগো বাড়ির মো. বাবুল মাঝির ছেলে। তিনি আবুধাবি আলাইন শহরে থাকেন। ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট আবুধাবি পাড়ি জমান।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কর্মসূচিতে মো. ইয়াসিন অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং তার ভাই জাহাঙ্গীরের পক্ষে বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করেছিলেন। ২১ অক্টোবর আবুধাবি সিআইডি তাকে ফোন করে দেখা করতে বললে সে ভয়ে দ্রুত টিকিট কেটে দেশে চলে আসতে চেয়েছেন কিন্তু রাত ১২টায় দুবাই বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে তাকে আটক করা হয়। তারপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ইয়াসিনের মা আয়েশা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বড় ছেলে ৪৫ দিন জেল খেটে এক কাপড়ে বাড়িতে এসেছে। এখন সেজ ছেলে নিখোঁজ হয়েছে। আমি হতভাগা মা। আমার সন্তানকে বুকে ফেরত চাই। ড. ইউনুস স্যার যদি আমাদের জন্য দয়া করেন তাহলে আমি নামাজ পড়ে দোয়া করতাম। আল্লাহ আপনি আমার সন্তানকে আমাদের মাঝে ফেরত এনে দেন।

ইয়াসিনের বাবা মো. বাবুল মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইটভাটার শ্রমিক আমি। অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়ে বড় করেছি। বড় ছেলে জাহাঙ্গীরকে অনেক কষ্টে বিদেশ পাঠিয়েছি। আজ সেই ছেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব রেখে বাড়িতে চলে আসছে। আরেক ছেলে বিমানবন্দর থেকে নিখোঁজ। টিকেট কেটেও দেশে আসতে পারেনি। ড. ইউনুস স্যার যদি দয়া করেন তাহলে আমার সন্তান আমার বুকে ফেরত আসতো।

ভাই জাহাঙ্গীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর আমার ভাইকে খুঁজছিল পুলিশ। আমি ৪৫ দিন কারাগারে থাকার পর দেশি আসি। ড. ইউনুস স্যারের কারণে আমাদের সবাইকে মুক্তি দেয়। তাই আমরা দেশে এসেছি। আমার ভাইসহ সবাই ভেবেছে এই ঘটনায় যেহেতু সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছে আর কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু পুলিশ প্রায় তিন মাস পর আমার ভাইকে কল দেয়। তাই সে ভয়ে টিকেট কেটে দেশে চলে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু দুবাই বিমানবন্দর থেকে সে আটক হয়। এক সপ্তাহের বেশি সময় তার কোনো খোঁজ নেই। আমরা প্রধান উপদেষ্টারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

এ বিষয়ে নোয়াখালী ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সরকারি পরিচালক খুরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গত ১৮ জুলাই দুবাইতে থাকা প্রবাসীরা ঐক্যবদ্ধভাবে পতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরদিন ওই দেশের পুলিশ আন্দোলনরত বাঙালিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। তার মধ্যে নোয়াখালীর জাহাঙ্গীরসহ আরও অনেকে রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পর জাহাঙ্গীরের ভাই ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করায় তারা অনেক ভেঙে পড়েছে। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি। সেখান থেকে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে ইয়াসিনের সন্ধান ও দেশে আসা সহজ হতো। 

হাসিব আল আমিন/আরকে