পণ্য ছাড়াই রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়লো ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’
উদ্বোধনের প্রথম দিনেই রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফাঁকা গেলো ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাপক প্রচারণা চালালেও ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। আগামীতে সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তারা। তবে রাজশাহীর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রেলওয়ে ট্রেন চালুর বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করেনি। বিশেষ এ ট্রেনের খবর তারা জানেন না।
বিজ্ঞাপন
রাজশাহী থেকে কোনো কৃষিপণ্য যায়নি। তবে ১৫০ কেজি খালি ডিমের খাঁচা গেছে। সপ্তাহে প্রতি শনিবার রহনপুর থেকে রাজশাহী রুটে ট্রেনটি চলাচল করবে। আগামী শনিবার পণ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।
রাজশাহী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে আর ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। এতে প্রতি কেজি কৃষিপণ্য খরচ পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা।
স্পেশাল এই ট্রেনটিতে রয়েছে পাঁচটি লাগেজ ভ্যান বগি। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি রয়েছে একটি, বাকি চারটি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য রয়েছে ব্যবস্থা। সবজির সঙ্গে তাদের বিনা ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে ১৩টি স্টেশনে যাত্রা বিরতি করে তেজগাঁও স্টেশনে থামবে। ট্রেনটি নাচোল, আমনুরা জং, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহরোড, আড়ানি, আব্দুলপুর, আজিমনগর, ঈশ্বরদী বাইপাস, চাটমোহর, বড়ালব্রিজ, জয়দেবপুরে থামবে। এ ছাড়া সব আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত আছে বলে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল ভাড়া কম থাকলেও কুলি ও অন্যান্য পরিবহন খরচ মিলে সড়কপথের চেয়ে ট্রেনে খরচ পড়ছে বেশি। মাঠ থেকে স্টেশন, স্টেশন থেকে মোকাম আলাদা পরিবহন খরচ ও কুলি খরচ মিলে প্রতিকেজির খরচ দাঁড়ায় ৩ টাকারও বেশি। অন্যদিকে, ট্রাকে মালামাল পরিবহনের খরচ হয় দুই থেকে আড়াই টাকা। এইজন্য ট্রেনে মালামাল পরিবহনে সাড়া দিচ্ছেন না তারা।
ইসারুল ইসলাম নামে এক কৃষক বলেন, ট্রেনের সময় সকালে হওয়ায় পণ্য ঢাকায় পৌঁছাবে বিকেলে। আর ঢাকায় বাজারজাত করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এই সময় সবজি বেচাকেনা বেশি হবে না এবং কাঁচামাল পচে যাওয়া সম্ভাবনা আছে।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, রাজশাহী থেকে কোনো সবজি ঢাকায় যায়নি। তবে ১৫০ কেজি ডিমের খালি খাঁচা গেছে। মার্কেটে সবজি কম। তাই ব্যবসায়ীরা সবজি পাঠাচ্ছে না। প্রতিদিন ১২০ টন পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা মিলবে এই ট্রেনে। প্রতি কেজি সবজি ও কৃষিপণ্য বহনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা এবং রাজশাহী থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ১৮ পয়সা।
ঢাকা যেতে অন্য স্টেশনগুলো থেকে কৃষিপণ্য এই ট্রেন উঠবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা ঠিকঠাক বলা যাচ্ছে না। তবে হতে পারে। ব্যাপক প্রচারণা চালালেও ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে আগামীতে সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তারা।
রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, রেলওয়ে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালুর বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করেনি। তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করলে আজকে এইভাবে খালি ট্রেন যেত না। বিশেষ এ ট্রেনের খবর তারা জানেন না।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো. আশিক আলী]
শাহিনুল আশিক/এএমকে