দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দিয়েছেন ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি এ পোস্ট দেন।

এর আগে গত ৪ আগস্ট ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া ভিডিও আপলোড করেছিলেন তিনি। মাঝে ফেসবুকে তিনি কোনো পোস্ট দেননি। ৪ আগস্ট তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘এটা কী আন্দোলন না নাশকতা? এদেরকে প্রতিহত করুন। এরা দেশ ও জাতির শত্রু। জয় বাংলা।’

আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে লাবু চৌধুরী লেখেন, ‘আমার এলাকার জনগণ ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে জানাচ্ছি যে, আমার বিরুদ্ধে একের পর এক বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অসৎ উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রচার এবং সর্বশেষে দেশ টিভিতে আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এমনকি ইটিভি আমার মা সৈয়দা সাজেদ চৌধুরীকে নিয়ে বানোয়াট সংবাদ প্রচার করেছে।’

তিনি লিখেন, ‘ওইসকল সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব ইনশাআল্লাহ। আমার গ্রামের বাড়িতে এক বিঘা জমি ছাড়া দেশ-বিদেশে কোথাও কোনো সম্পদ অর্থাৎ জমি ও বাড়ি নেই। এমনকি দেশের বাইরে কোথাও কোনো অর্থ গচ্ছিত নেই। সবসময় আমি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। এলাকায় বিরোধী দলের নেতাকর্মী বা সমর্থকরাও আমার কাছে নিরাপদ ছিল। আমি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সন্তান। মা ও বাবার আদর্শ ধারণ করেছি জনগণের মঙ্গলের নিমিত্তে। রাজনীতিতে ছিলাম, আছি, থাকব। জয় বাংলা - জয় বঙ্গবন্ধু।’

ফরিদপুরের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় ১৮ বছরের সাজা ও দেড় কোটি টাকা জরিমানা হয় সাজেদাপুত্র লাবুর। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করে। পরে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওই বছরের ১৬ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান লাবুর সমস্ত শাস্তি মওকুফ করে দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বড় ভাই আয়মন আকবরকে হটিয়ে নগরকান্দা-সালথায় মা সাজেদা চৌধুরীর পক্ষে তার ‘রাজনৈতিক প্রতিনিধি’ পরিচয়ে নগরকান্দা-সালথায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন লাবু। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে ওই আসন শূন্য ঘোষণা করা হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হন লাবু। এরপর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মায়ের আসন ফরিদপুর-২ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর লাবুকে আট নম্বর আসামি করে ১ সেপ্টেম্বর একটি হত্যা মামলা হয় ঢাকা মহানগর চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর লাবুকে ১৫ নম্বর আসামি করে আরও একটি হত্যা মামলা হয় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর বিএনপির ডাকা হরতালের সময় ফরিদপুরের নগরকান্দায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মারুফ মাতুব্বর (২২) হত্যার ১১ বছর পর দায়ের করা হত্যা মামলায়ও হুকুমের আসামি হিসেবে এক নাম্বারে তার নাম দেওয়া হয়।

জহির হোসেন/এফআরএস