পারিবারিকভাবে দীর্ঘ বছর ধরে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ছালো উদ্দিন। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ছয়টা পুকুর ও দুইটা ঘের ভেসে গিয়ে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। মাছের শোকে আর ঋণের চাপে পাগলপ্রায় হয়ে গেছেন তিনি।

ছালো উদ্দিন নোয়াখালী সদর উপজেলার নেওয়াজপুর ইউনিয়নের দানামিয়ার বাজার এলাকার মৃত বজু মিয়ার ছেলে। কেবল ছালো উদ্দিন নয়, বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জসিম উদ্দিন বন্যায় ৩০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গিয়ে হয়ে গেছেন পথের ফকির। চাকরির সঞ্চয় থেকে পুকুর ও ঘের লিজ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু জসিম উদ্দিনের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন। ঘুমের মধ্যেও আতকে উঠেন তিনি।

জানা যায়, নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যায় ৮৫ হাজার মাছের পুকুর-ঘের বন্যায় ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬১৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেগমগঞ্জ উপজেলা।

মৎস্য চাষি ছালো উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৈত্রিকভাবে আমরা সবাই জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত। আমরা বছরজুড়ে মাছ উৎপাদন ও বিক্রি করি। সারাদিন মাছ নিয়েই পড়ে থাকতাম। যখন পানি উঠেছে তখন ১২ ফুটের নেট দিয়েছি কিন্তু তাতেও রক্ষা হয় নাই। সন্তানদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছি। আমার ছয়টা পুকুর ও দুইটা ঘের ভেসে গিয়ে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমি এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি৷ সরকার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না।

বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চাকরির সঞ্চয় থেকে তিনটা পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমাদের এলাকায় কখনো এতো পানি আগে কেউই দেখেনি। এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে। নিজের সঞ্চয় ও ঋণে এখন পথের ফকির হয়ে গেছি।

বেগমগঞ্জের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলে, বেগমগঞ্জ উপজেলায় সব থেকে বেশি মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার চাষি ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন। মাঠপর্যায়ে আমরা পরিদর্শনে গিয়ে এখনো মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি দেখছি। পুকুর যে মাছশূন্য তা টের পাওয়া যাচ্ছে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যায় প্রায় ৮৫ হাজার পুকুর ঘের ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৬১৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি বরাদ্দ এখনো আসেনি। তবে আমাদের প্রান্তিক চাষিদের জন্য পোনা মাছ অবমুক্ত কর্মসূচি রয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব কর্মসূচি পালন করছি। সরকারি বরাদ্দ পেলে আমরা চাষিদের পুনর্বাসনে কাজ করবো।

হাসিব আল আমিন/এএমকে