দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজের সমারোহ। কাছে গেলেই নজর কাড়বে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা একেকটি পেঁপে গাছ। মাটি থেকে গাছের আগা পর্যন্ত শুধু পেঁপে আর পেঁপে। প্রতিটি গাছে এক মণ থেকে আড়াই মণ পর্যন্ত পেঁপে আছে। এ বাগানে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হেলাল উদ্দিন। কারণ এ বাগান ঘিরেই বছরে ২০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন বুনছেন তিনি।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাটের কৃষক হেলাল উদ্দিন। ৪৮ বছর বয়সী এই কৃষক পড়ালেখা না জানলেও জানেন ভাগ্য বদলে পরিশ্রমই হাতিয়ার। তার পেঁপে বাগান ঘিরে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পেশায় কৃষক হেলাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করলেও দুই বছর আগে মনোনিবেশ করেন পেঁপে বাগান ঘিরে। স্থানীয় যুবক আব্দুর রশিদের পরামর্শে ১৬ শতাংশ জমিতে ‘টপ লেডি’ জাতের পেঁপে দিয়ে শুরু করেন বাগান। সম্প্রতি মিঠাপুকুরে সরেজমিনে গিয়ে কৃষক হেলালের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব তথ্য জানা যায়।

কৃষক হেলাল উদ্দিনের ভাষ্যমতে, বাগান শুরুর সময় ১৪ হাজার টাকা খরচে তার লাভ হয়েছিল লক্ষাধিক টাকার ওপরে। বর্তমানে ১৭০ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করছেন, যা থেকে বছরে ২০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি গাছে এক মণ থেকে আড়াই মণ পর্যন্ত পেঁপে আছে। আর একেকটি পেঁপের ওজন এক থেকে তিন কেজি পর্যন্ত। এসব পেঁপে পাকতে শুরু করলে গাছ থেকেই বিক্রি করব। কারণ কাচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপে বিক্রিতে তিনগুণ বেশি লাভ।

হেলাল উদ্দিন এখন তার পরিবারের দুই সন্তানকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন। বাগানে চারজন তাকে সহযোগিতা করছেন প্রতিনিয়ত। পেঁপে বিক্রির টাকায় বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। রংপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার নির্ধারিত পাইকাররা তার কাছ থেকে পেঁপে কিনে থাকেন। তবে এ বাগান করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে তেমন সহযোগিতা বা পরামর্শ না পেলেও উৎসাহ পেয়েছেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে।

এই প্রতিবেদককে হেলাল উদ্দিন জানান, পাকা পেঁপে পাইকারি প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। কখনো কখনো বাজার পরিস্থিতির কারণে দামের হেরফের হয়। তার বাগানে শুধু ‘টপ লেডি’ জাতের পেঁপে গাছ রয়েছে। এতে একটি গাছ থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই কৃষকের সফলতা দেখে বালারহাটের শতাধিক কৃষক পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন। এ বছর জেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২-১৫ হাজার মেট্রিক টন।

তিনি আরও বলেন, সম্ভাবনা থাকায় পেঁপে চাষে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শসহ যাবতীয় সহায়তা করা হচ্ছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ