বঙ্গোপসাগারে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলার সাত উপজেলায় বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়া বইছে। মেঘনা, তেতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকলেও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে জোয়ারের পানি। তবে আতঙ্কে রয়েছে চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ। দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে দাবি জেলা প্রশাসনের।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বুধবার দুপুরে ভোলা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এতে ৫০০ জন করে মোট ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। ১৪টি মাটির কিল্লায় ৭০০ জন করে ৯ হাজার ৮০০ জন, এ ছাড়া ১৪টি কিল্লায় ৫ হাজার ৩৯০টি গবাদিপশুর আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিপিপি রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১৩ হাজার ৮৬০ জন, ৯৮টি মেডিকেল টিম, ২১টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

এ ছাড়া ৫৮৪ টন ত্রাণ সামগ্রী, ৩৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ শিশুখাদ্য এবং গোখাদ্যও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মনির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বঙ্গোপসাগরের কোলেই বসবাস করি। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়া বইছে। আমাদের ঢালচরে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। এখন আমরা খুব চিন্তায় আছি, না জানি কি হয়। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রেমালে আমাদের বাড়িঘরসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে গবাদিপশু নিরাপদে রাখার জন্য কোনো কিল্লাও নেই।

দক্ষিণ আইচা, তজুমদ্দিন, লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা মো. ফিরোজ, মো. রুবেল. মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ভোরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও সকাল নাগাদ বৃষ্টি ছিল না। এরপর দুপুরের দিকে ফের গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, যা এখনো চলছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে মেঘনা নদীর তীরবর্তী ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি এলাকার বাসিন্দা মো. হানিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝড়তুফান যাই হোক আমরা কখনো ঘরবাড়ি রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি, আজও যাবো না। আল্লাহ যা করেন।

ভোলা জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আজ দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাত বাড়বে বলেও জানান তিনি।

দুপুরে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-১) মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়নি এবং বিপৎসীমাও অতিক্রম করেনি।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোলা জেলাকে সংরক্ষিত রাখার জন্য গতকাল জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি জরুরি সভা করেছি। সভা থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

ভোলায় ৮৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৯৮টি মেডিকেল টিম, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, গোখাদ্য ও নগদ টাকা, স্বেচ্ছাসেবী, প্রস্তুত রেখেছি। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা তৎপর রয়েছেন।

ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের যেখানে আশ্রয়কেন্দ্র নেই সেখানে আমরা বড় বড় নৌকা প্রস্তুত রেখেছি। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেবো।

এএমকে