জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৯ লাখ কিশোরীকে  হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিভাগের আটটি জেলা ও একটি সিটি কর্পোরেশনে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই টিকাদান কার্যক্রম। ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে টিকাদান কার্যক্রম।    

পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে। আগামী বছর থেকে সরকারিভাবে এ টিকা শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীদের দেওয়া হবে। আর স্কুলের বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের মধ্যে ১০ বছর বয়সীরা পাবে এ টিকা।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগে ৯ লাখ ১৭৪ জন কিশোরীকে এইচপিভি টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।  বিভাগের সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বগুড়া জেলায়। এই জেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ জন কিশোরীকে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়াও রাজশাহী জেলায় ১ লাখ ৪৮৮ জন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ২৩ হাজার ৭০১ জন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪ জন, পাবনা জেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮০ জন, নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮৯ হাজার ৭৭৭ জন, নাটোর জেলায় ৭৭ হাজার ৮৫ জন ও জয়পুরহাট জেলায় ৩৯ হাজার ৩৮ জন কিশোরীকে টিকা দেওয়া হবে।

রাজশাহী ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবা খাতুন বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন গর্ভধারণ, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, ঘন সাদা স্রাব, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব। এইচপিভি টিকা নিরাপদ এবং এ টিকার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বলে প্রমাণিত।

রাজশাহী স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসায় প্রচার চালানো হয়েছে। এ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে প্রচারণা চালানো হয়েছে। যারা স্কুলের বাইরে আছে তাদেরও এই ক্যাম্পাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এজন্য প্রতিটি মসজিদ ও মন্দিরে প্রচার চালানো হচ্ছে। 

তিনি বলেন, জরায়ুমুখ ক্যানসার নারীদের জন্য একটি অভিশাপ। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যাচ্ছে। অনেকে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় জীবন কাটায়। এইচপিভির এক ডোজেই ৯৫ শতাংশ এই ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এখন বিনামূল্যে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে নিজ উদ্যোগে তা ক্রয় করতে ৫ হাজার টাকা লাগবে। সরকারি টিকার গুণগতমান নিঃসন্দেহে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া কোনও টিকা সরকারিভাবে দেওয়া হয় না। এই টিকার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিভি টিকা সংযোজন করেছে। সারা দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

এনএফ