বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগপত্র না দিয়েও থাকে, দেশকে অরক্ষিত রেখে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারকে কলঙ্কিত করার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হওয়া চাই।

আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভোলা জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে খেলাফত মজলিসের জনশক্তি সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে মামুনুল হক বলেন, নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাববেন না। এ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শুধু ফরমাল লোক দেখানো ও মিডিয়ায় প্রচারের বৈঠক নয়, ইন্টারনাল যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দল থেকে মতামত গ্রহণ করুন। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিপ্রায় অনুযায়ী দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।

তিনি আরও বলেন, কবে নাগাদ আপনারা সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন কমিশন সংস্কার, নির্বাচন ও শিক্ষাব্যবস্থা থেকে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিকতা বিদায় করে আপনারা সসম্মানে বিদায় নেবেন তা জাতির সামনে খোলাসা করুন। মনে রাখবেন রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া এ ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।

আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ক্ষমতার মসনদে বসে ক্ষমতাকে শেখ হাসিনার মতো বাপ-দাদার সম্পদ মনে করবেন না। এটাকে জনগণের পক্ষ থেকে প্রদত্ত আমানত মনে করেন। জনগণ এখনো আপনাদেরকে ভালোবাসে, আপনাদের ওপর আস্থা রেখেছে। যেকোনো সংকটে এ দেশের আলেম সমাজসহ জনগণ আপনাদেরকে সেফটি দেওয়ার জন্য রাজপথে নামতে প্রস্তুত আছে। আপনারা কোনো পক্ষকে অবহেলা করবেন না, সকলকে কাছে টেনে নিন। এ দেশের আলেমসমাজের শক্তিকে তুচ্ছ ভাববেন না।

তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারে উদ্দেশ্যে আরও বলেন, তাকিয়ে দেখুন। বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে ওলামায়ে কেরামের নামে বাঁধভাঙা জোয়ার নামছে জনতার। এ জনতাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করছে। এরাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। এরাই ২০১৩ সালে রক্ত দিয়েছে শাপলা চত্বরে, ২০১৯ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনে, ২০২১ সালে হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রক্ত দিয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এদের মূল্যায়ন করুন।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, আগামীতেও আমাদের এই ঐক্য অটুট ও মজবুত দেখতে চাই। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেই। কিন্তু এখনই আমাদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার সময় হয়নি। সীমান্তের ওপার থেকে ফ্যাসিবাদ উঁকিঝুঁকি মারছে। আবার ভিনদেশের এজেন্ট হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার জন্য জন্য পতিত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাই যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করেছেন তারা যার যার মঞ্চ থেকে ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলার জন্য দৃঢ়চেতার এ ঐক্য মজবুত রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মনে রাখতে হবে যদি বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পায় তাহলে বাংলাদেশের একজন দেশপ্রেমিককেও ছাড় দেবে না।

ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্য তিনি বলেন, হঠাৎ আবেগে আপ্লুত হয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। দেশটাকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করার জন্য দেশের ভেতর ও বাহির থেকে একযোগে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা বাংলার ২০ কোটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে দেশের ভেতর ও বাইরের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে, হাজার বছর আগে একবারগৌর গোবিন্দ পালিয়েছে, হাজার বছর পর শেখ হাসিনা পালিয়েছে। আর কোনো নেতা এভাবে দেশ ও দল ছেড়ে পালাননি। শেখ হাসিনা এসেছে এ দেশটাকে ধ্বংস করার জন্য।  লক্ষ কোটি টাকা শেখ হাসিনা বিদেশে পাচার করেছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। শেখ হাসিনা এত টাকা চুরি করেছে বাংলাদেশটাকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। এ দেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে এবং ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারে। এ দেশের অর্থনীতির ভিতকে ধষিয়ে দেওয়াই ছিল শেখ হাসিনার রাজনীতির মূল হাতিয়ার।

এ ছাড়া সম্মেলন থেকে খেলাফত মজলিসে সকলকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ জনশক্তি সম্মেলনে খেলাফত মজলিসের ভোলা জেলা শাখা উত্তরের আহ্বায়ক মাওলানা মাকসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসনাত জালালি প্রমুখ।

এমজেইউ