গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে জামায়াত কর্মী শাহাবুল ইসলামকে (৩৮) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা করেছে নিহতের পরিবার। হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পর নিহত শাহাবুল ইসলামের ছোট ভাই এসএম শাহজাহান কবির বাদী হয়ে এ মামলা করেন। 

বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আমলি আদালতের উপপরিদর্শক কামাল হোসেন। 

এর আগে গতকাল রাতে হত্যা মামলাটি রেকর্ড করে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ। মামলায় আওয়ামী লীগের ৭৯ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এতে ২০১৬ সালে নিজ বাড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে যান শাহাবুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান (৩২)। এ সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শাহাবুল ও মিজানুরকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর সংঘবদ্ধ হয়ে এজাহার নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জন মিজানুর রহমানের ওপর দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালায়। এতে ধারালো ছুরি, রাম দা, কুড়াল, শাবল ও বেশি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার সময় বাঁচার জন্য স্থানীয় মোনায়েমের বাঁশঝাড়ে অবস্থান নিলে আহত মিজানুরকে ঘিরে ধরে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায় ও শরীরে গুরুতর জখম করে অভিযুক্তরা। এরপর মিজানুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাম দা, ছুরি ও লাঠি দিয়ে পুরো শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় মিজানুর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বাদির বড় ভাই শাহাবুল ইসলাম রক্ষা করার চেষ্টা করেন। 

এ সময় উল্লেখিত আসামিরা শাহাবুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা রাম দা, বেকি, ছুরি, শাবল ও বল্লম দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে। ঘটনার সময় আসামিরা গুরুতর আহত মিজানুরকে মৃত ভেবে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে গুরুতর আহত মিজানুর ও শাহাবুল ইসলামকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহাবুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গুরুতর আহত মিজানুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে রেফার্ড করা হয়। হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় দীর্ঘ ১০ বছর পর পরিবারের পক্ষে তার ছোট ভাই এসএম শাহজাহান কবির বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে নথিভুক্ত করে থানা পুলিশ।

উপপরিদর্শক কামাল হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে শাহাবুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এতে সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিকে প্রধান আসামি করে ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের নামে মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রিপন আকন্দ/আরএআর