নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ২০১৯ সালে শিশু মেহেরাজ হোসেনকে (৭) অপহরণ , হত্যা ও মুক্তিপণ দাবির মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হাসতে হাসতে আদালত থেকে বের হয়েছেন। বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। তার একটু আগেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এর বিচারক মো. আব্দুর রহিম আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। 

আসামিরা হলেন- নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহিম রনি ও শহিদুল্লাহর ছেলে মো. সালমান শিবলু। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রায় ঘোষণা শেষে আসামিদের পুলিশি বেষ্টনীতে এজলাস থেকে বের করা হচ্ছে। এ সময় আসামি আব্দুর রহিম রনি ও সালমকন শিবলু হাসতে হাসতে আদালত থেকে বের হচ্ছেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ তাদের একটুও বিচলিত করেনি।

জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের প্রবাসী সোলেমান মিয়ার ছেলে মেহেরাজ হোসেন স্থানীয় মাদরাসার দ্বিতীয় জামায়াতের ছাত্র ছিল। ২০১৯ সালের ২১ মার্চ মাসে মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে আসামিরা সুকৌশলে খাবারের লোভ দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী নোয়ান্নই ইউনিয়নের পরিত্যাক্ত বাড়িতে নিয়ে যায়। তারপর সেখানে পরিধানের জামাকাপড় দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে অর্ধ মাটি চাপা দেন। তারপর শিশুটির বাবা মায়ের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। পরে এ ঘটনায় শিশুটির মা রুনা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করলে ঘটনার তৃতীয় দিন পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। দীর্ঘ ৫ বছর পর ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের যাবজ্জীবনের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত।

নিহতের মা রুনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। কিন্তু আজ রায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ায় তারা হাসতে হাসতে বের হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করব।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মামুনুর রশীদ লাভলু ঢাকা পোস্টক বলেন, রায় ঘোষণার পর আসামিরা হাসিখুশি মনে বের হয়েছে। মনে হয়েছে তারা কাঙিক্ষত রায় পেয়েছেন। আসলে বিষয়টি দুঃখজনক। তারা হত্যার  স্বীকারোক্তি দিয়েও আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ রায়ে বাদীপক্ষ অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

এদিকে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েও আদালতে মুক্তিপণের বিষয়টি প্রমাণিত করা যায়নি। তারপরও আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই মামলা দায়েরের সময় কোনো আসামির নাম ছিল না। স্থানীয় ষড়যন্ত্রের কারণে আসামিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারাও উচ্চ আদালতে যাবেন।

হাসিব আল আমিন/আরএআর