বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদার বুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের মো. রায়হান আকন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোক আর অভাবের তাড়নায় দিশেহারা শহীদ রায়হানের অসুস্থ মা রেহেনা বেগম (৪০)। ছেলের স্মৃতি মনে পড়লেই করেন আহাজারি।

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) শহীদ রায়হান আকনের নিজ বাড়িতে গেলে দেখা যায় তার অসুস্থ মা বিছানায় কাতরাচ্ছেন। পাশেই বসে আছে দিনমজুর বাবা। ছেলের মৃত্যুর কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন দুজনেই!

শহীদ রায়হানের বাবা মো. কামাল আকন বলেন, ‘আমার ছেলে ৫ আগস্ট বাড্ডা থানায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। সেদিন সকালেও আমার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হইছে, তখন বলছে ১০ আগস্ট বেতন পাওয়ার পর অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে বাড়িতে আসবেন। কথা বলা শেষে আমি বাজারে গেছি কিছুক্ষণ পর শুনি আমার ছেলে গুলি খাইছে। ওই দিন ওষুধ ছাড়াই আমার ছেলে লাশ হইয়া বাড়ি ফিরেছে।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসচ্ছল পরিবারের হাল ধরতে এপ্রিলে পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকায় যান রায়হান আকন। ঢাকায় গিয়ে বাড্ডা এলাকায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে সাড়ে ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন তিনি। তার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। অসুস্থ মায়ের ওষুধ, ছোট বোনের পড়ার খরচ এবং বাবার পকেট খরচসহ সবকিছুরই যোগান দিতেন তিনি। আর ঢাকায় গিয়েই রায়হান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রায়হান। তার এই মৃত্যু পরিবার ও এলাকাবাসীর মনে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার পরিবার। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই পরিবারটিকে যথাযথ সহায়তা এবং মানসিক সান্ত্বনা দিতেও তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি। শুধু জামায়াতে ইসলামী থেকে ২ লাখ এবং জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পায় পরিবারটি, যা দৈনন্দিন বাজার খরচেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

শহীদ রায়হানের অসুস্থ মা রেহেনা বেগম বলেন, 'আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমাদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকবে। অনেক কষ্ট কইরা আমি আমার বাবারে বড় করছি। সবেমাত্র সুদিন আসতে শুরু করছিল। কিন্তু শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হইয়া গেছে। চাকরি করতে গেছে আমাগো ভরণপোষণ সব দেবে, কিন্তু আমার বাবাই লাশ হইয়া ফেরছে।'

শহীদ রায়হানের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি তার পরিবারের সংকট মোকাবিলায় এই মুহূর্তে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশাপাশি অসহায় পরিবারটিতে সচ্ছলতা ফেরাতে সরকারি-বেসরকারি সংগঠন ও সমাজের বিত্তবানদেরকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইফফাত আরা জামান উর্মি বলেন, আমারা রায়হান আকনসহ এই উপজেলার সকলের তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি৷ সরকারি সহায়তা আসলে অবশ্যই তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। আমরা তাদের বর্তমান খোঁজ-খবর নিচ্ছি, চেস্টা করবো উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করতে।

এএমকে