লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে দক্ষিণ ঘনেশ্যাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে ফের আন্দোলনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের তুষভান্ডার বাজার অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়। এতে রাস্তার দুইপাশে দুইশতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ঘণ্টাখানেক পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার মনির উদ্দিন ছুটিতে থাকা অবস্থাতেই তার লোকজনসহ লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামসুল হককে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে চাপ দেন। এতে বাধা দিলে সহকারী শিক্ষক অধর চন্দ্রকে মারধর করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে তাদেরও বেধড়ক মারধর করা হয়। এত ১৮ শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে শরিয়ত হাসান নামে এক শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনসহ অবৈধভাবে একাধিক নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি টেন্ডার ছাড়া বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করতেন তিনি।

এসব অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন। সম্প্রতি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগও করেন তারা। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি নোটিশের জবাব না দিয়ে এক মাসের ছুটি নেন। এরপর মঙ্গলবার হঠাৎ তিনি ওই হামলার ঘটনা ঘটান।

দক্ষিণ ঘনেশ্যাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের মো. রাসেল ইসলাম নামে এক ছাত্র বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে মনির উদ্দিন কালীগঞ্জ থানায় সহকারী শিক্ষক অধর চন্দ্রকে প্রধান আসামি করে উলটো আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এ খবর শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বুধবার সকালে এর প্রতিবাদে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা মনির উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের পাঁচজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

দক্ষিণ ঘনেশ্যাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক অধর চন্দ্র বলেন, ক্লাস চলাকালীন প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। ১ লাখ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। কিন্তু স্বাক্ষর না দেওয়াতে গালাগালি করলে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। এতে ১৮ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। 

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আগামীকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিযোগ নিয়ে বসতে চেয়েছি। এ ছাড়াও পুরো বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএমকে