রংপুরে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি শুরুর পরও থামানো যাচ্ছে না সিন্ডিকেট। বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ডিমের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ তুলছেন ভোক্তাসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণসহ সিন্ডিকেটের বলয় ভাঙতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স।

গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রংপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর এলাকায় ভিআইপি শাহাদাৎ পোল্ট্রি ফার্মে অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। এ সময় সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে ডিম বিক্রি ও মূল্য তালিকা না থাকায় ওই পোল্ট্রি ফার্মকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

রংপুর মহানগর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার ফরিদা সুলতানা বলেন, বর্তমানে বাজারে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। বাজারে অভিযান চালানো হলে ব্যবসায়ীরা খামার পর্যায়ে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তার প্রেক্ষিতে সদরের বড় ডিম উৎপাদনকারী ভিআইপি শাহাদত পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারিতে অভিযান চালানো হয়।

এ ধরণের অভিযান অব্যবহৃত থাকবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার প্রতি পিচ ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু ওই পোল্ট্রি ফার্ম সরকার নির্ধারিত মূল্য মানছে না। তারা তার চেয়েও বেশি দামে ডিম বিক্রি করছেন। এ কারণে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফার্মের মালিককে সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে বিশেষ টাস্কফোর্স ছাড়াও বাজার তদারকি ও কারসাজি রুখতে মাঠে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বুধবার দুপুরে রংপুর নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও বুড়িরহাট এলাকায় ভোজ্যতেল ও পাইকারি মুরগি বিক্রির পোল্ট্রি ফার্মে অভিযান পরিচালনা করে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সরকারি এই সংস্থাটি। এতে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন ও মোস্তাফিজার রহমান। এর দুদিন আগে আলমনগর এলাকায় পাইকারি মুরগি বিক্রির দুটি ফার্মে অভিযানে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অন্যদিকে গত রোববার (২০ অক্টোবর) থেকে রংপুরে সরকারি মূল্যে ডিম বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছে।

রংপুর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর, রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এবং রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রংপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের গেট সংলগ্ন-অস্থায়ী ডিম বিক্রয়কেন্দ্রে সরকার নির্ধারিত ১১ টাকা ৮৭ পয়সা মূল্যে প্রতিটি ডিম বিক্রি করা হবে।

ডিমের দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিন এই বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। এই কার্যক্রমের আওতায় প্রতিদিন ১০ হাজার ডিম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রশাসনের উদ্যোগে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি শুরু হলেও বাজারে ও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে ডিমের দাম তেমনটা কমেনি। এখনো কোথাও কোথাও পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা আর খুচরা বাজারে হালিতে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা দরে ডিমি বিক্রি করা হচ্ছে। আর সিদ্ধ ডিম প্রতি পিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা করে।

রংপুর সিটি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, ডিমের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। তাই বেশি দামে কিনে তারা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মূলত এ কারণেই দাম বেড়েছে। আবার বাজারে ৫-৬ বার ডিম হাতবদলও হচ্ছে। এটাও দাম বাড়ার কারণ।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর