গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ায় অবস্থিত ‘সবুজ বাংলা জেনারেল হাসপাতাল’ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও প্রত্যায়নের অভাবে পরিচালিত এই হাসপাতালটি নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ক্লিনিক বন্ধ করার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. কানিজ সাবিহা। এর আগে সর্বশেষ শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সোমবার বিকেলে তিনি এই আদেশ দেন।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে জুলাই মাসে স্বাস্থ্য প্রশাসনের একটি টিম হাসপাতালটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে। সেখানে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনো পরিবেশ নেই। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, সিজারিয়ান অপারেশনের রোগী ভর্তি থাকলেও সেখানে কোনো ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না। পরে এক চিকিৎসকের নাম সম্বলিত রেজিস্টার দেখানো হলেও সেই চিকিৎসক নিশ্চিত করেন যে তিনি ওই অপারেশনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

প্রথম তদন্তের পর হাসপাতালকে দুই মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল পরিবেশের উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য। তবে এই সময়ের মধ্যেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একজন চিকিৎসক ছাড়া কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেনি।

এরপর, দ্বিতীয় দফায় সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. সাজিয়া আফরিনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি টিম আবারও অভিযান চালায়। অভিযানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে হাসপাতালটিকে ৫০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

দ্বিতীয় পরিদর্শনে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় একজন নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাও উঠে আসে। অপারেশনের চিকিৎসক উপস্থিত থাকলেও অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নামও জানাতে ব্যর্থ হয়। নার্সদের মধ্যে চারজনের বৈধ কাগজপত্রও ছিল না।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. কানিজ সাবিহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সবুজ বাংলা ক্লিনিককে জরিমানা করা হয়েছে এবং বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমি ক্লিনিকটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে এলাকার মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও প্রশ্ন থেকেই যায়, কীভাবে বছরের পর বছর এমন অব্যবস্থাপনায় একটি ক্লিনিক পরিচালিত হয়ে আসছিল।

রিপন আকন্দ/এএমকে