বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচন একটা বড় উপাদান। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারেন। এটাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক টাউনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ইয়ামিনের পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার করুক। কিন্তু সেটা যাতে উপসংহারহীন না হয়। সংস্কারের কথা বলতে বলতে এটার তো একটা উপসংহার টানতে হবে। এটা যদি অনন্তকাল হয় তখন তো একটা প্রশ্ন দেখা দেবে। আপনারা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন নিয়ে যে কমিশনগুলো করেছেন সেগুলো যাতে দ্রুত কাজ করে এবং দ্রুত রিপোর্ট দেয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ সংস্কারের মূল কাজটা করবে তো পলিটিক্যাল পার্টি।

যুগ্ম সিনিয়র মহাসচিব বলেন, এই যে রাস্তার দাঁড়িয়ে কথা বলছি, এর আগে কি হতো?  আপনাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতেন এবং এই যে একটা অবদান, এই যে একটা মুক্তি, মুক্তির  সুবাতাসের মধ্যে আমরা আপাতত রয়েছি। এটা যাদের জন্য, তাদের পাশে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল যারা ১৬ বছর ধরে লড়াই করেছে, তারাই তো আন্দোলনের চূড়ান্ত পটভূমি রচনা করেছে। আমরা দেশের প্রত্যেকটি জায়গায়  যাচ্ছি, যেখানে নিহত-আহত হয়েছে। সেখানে শিশু আছে, ছাত্র-ছাত্রী আছে, নারী আছে এবং এমনকি সাংবাদিকও আছে। সিলেট নয়া দিগন্তের সাংবাদিক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এভাবেই সারা দেশে যাচ্ছে 'বিএনপি পরিবার'।  খোঁজ  নিচ্ছি  তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ।

আমাদের একটাই বক্তব্য, এখনো ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরা তাদের কালো টাকা এবং বেআইনি অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা গোলাগুলি করেছে।  অস্ত্র নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করেছেন। এই যে জড়ো অরণ্যের মধ্যে তারা লুকিয়ে আছে এবং প্রয়োজন মতো তারা  বেরিয়ে দেশটাকে অস্থিতিশীল করবে। এর জন্য আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বারবার চাপ দিয়েছি। আপনাদের কোনো ব্যর্থতার জন্য যদি ফ্যাসিবাদের পুনর্জীবন ঘটে, এর দায় আপনাদের সবার থাকবে এবং এতো আত্মত্যাগ, শহীদ এবং শহীদের রক্তের সঙ্গে  বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, আপনারা কেন এখনো বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছেন না। অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে সেই সমস্ত দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসী তাদেরকে গ্রেপ্তার করে সমাজে শান্তি স্থিতিশীলতা কেন ফিরিয়ে আনছেন না? গণতান্ত্রিকগামী সফল দল তো আপনাদের সমর্থন করেছে।

এ সময় রিজভী বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে বলেন, মানুষ যাতে না খেয়ে থাকে, এমন পরিবেশ যাতে না হয়। মানুষ যাতে দু-মুঠো খেতে পারে এজন্য বাজার সিন্ডিকেট, মার্কেট সিন্ডিকেট যারা এতদিন করেছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করুন। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। আমরা অল্প কিছু ড্রাইভ দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ব্যাপক আকারে ড্রাইভ দেখতে পাচ্ছি না।

এ ছাড়াও গণতন্ত্র নিয়ে যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে শান্তির পক্ষে মানুষ যাতে বসবাস করেন, খোলা গলায় যাতে মানুষ কথা বলতে পারে সমালোচনা করতে পারে, এটাই গণতন্ত্র আইনের শাসন থাকবে। কে কোন দল করে সেটা বড় ব্যাপার নয়, যে অপরাধী তাকে পুলিশ ধরবে এবং বিচারের আওতায় আনবে এটাই তো গণতন্ত্র। এতো যে আত্মদান আবু সাঈদ, ইয়ামিন, নাফিসা এদের আত্মদান বৃথা হয়ে যাবে যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে না পারেন বলে জানান তিনি ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু, সাবেক পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহ, সাভার পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদির, সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি শাহ মঈনুল হোসেন বিল্টু, ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাবেক ঢাকা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক বিএনপি রাশেদুল আহসান রাশেদ, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভিসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা।

লোটন আচার্য্য/এএমকে