ট্রাকশ্রমিক মো. খোকনকে (২৫) গুলি করে হত্যা মামলায় নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২১ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতের বিচারক ইকবাল হোসাইন এই আদেশ দেন।

জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এমপি একরামুলকে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) ১নং আমলি আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুধারাম মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক মো. সাবজেল হোসেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর নিহত ট্রাকশ্রমিকের বাবা মজিবুল হক বাদী হয়ে ২০১৩ সালে ছেলে খোকন নিহতের ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের ৫৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সুধারাম মডেল থানায় এ মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের জন্য নোয়াখালীর সদর উপজেলার দত্তেরহাটের দত্ত বাড়ির মোড়ে জমায়েত হন বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা। ট্রাকশ্রমিক খোকন সেই সময় নিজ বাড়ি থেকে দত্তেরহাট শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে যাচ্ছিলেন। সেখানে সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, সাবেক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন জেহান, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু, নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র শহীদ উল্যাহ খান সোহেলসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি-জামায়াতের মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। সেসময় একরামুলসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে খোকন গুলিবিদ্ধ হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, খোকনকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নোয়াখালী জেলা কোর্ট পরিদর্শক শাহ আলম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুধারাম মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. সাবজেল হোসেন ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তারা বলেন, গত ১ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রামের খুলশির বাসা থেকে একরামুল করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরদিন সকাল সোয়া ৭টায় তাকে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১নং আমলি আদালতে হাজির করা হয়। পরে সুধারাম মডেল থানার একটি হত্যা মামলায় একরামুল করিম চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেন।

তারা আরও বলেন, আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এমপি একরামুলকে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) ১নং আমলি আদালতে হাজির করা হলে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতের বিচারক ইকবাল হোসাইন ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এ ছাড়া টানা ১৭ বছর ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিছুদিন আগেও তার কথার বাইরে এলাকায় কিছুই হতো না। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। নোয়াখালীর রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন একরামুল। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন দলের অন্য নেতারাও।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ