টানা ১২ ঘণ্টা রিকশাচালককে পেটালেন দাদন ব্যবসায়ী ছয় ভাই
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ছকু মিয়া নামে এক রিকশাভ্যান চালককে পা বেঁধে রাতভর বাড়িতে আটকে রেখে বেধরক মারপিট করে হাত-পা ও দাঁত ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দাদন ব্যবসায়ী ছয় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর (পাতারীবাড়ি) গ্রামে।
বিজ্ঞাপন
পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছয় ছেলে আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদন (সুদ) ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে আজ অনেকেই নিঃস্ব। এ সুদের টাকায় তারা অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে আসছেন।
এলাকাবাসী জানায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে সুদ ব্যবসায়ী মন্টু মিয়ার অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে মণিশা আকতার (১৪) প্রতিবেশী ছকু মিয়ার ছেলে গামেন্টকর্মী মোজাম্মেল হকের (১৫) হাত ধরে পালিয়ে যায়। এরপর রাত ৭টার দিকে মন্টুসহ তার পাঁচ ভাই আলমগীর আংগুর, রনজু, মনজু ও সনজু দল বেঁধে ছকু মিয়ার বাড়িতে যায়। পরে ছয় ভাই মিলে রাতভর লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারপিট করতে থাকে তাকে। এতে তার এক হাত ও এক পা ভেঙে যায়। এছাড়া পুরো শরীরে চিহ্ন পড়েছে ক্ষতের। ভেঙে গেছে একটি দাঁতও।
এদিকে, সকাল থেকে ছকু মিয়ার বাড়িতে চুলা পর্যন্ত জ্বলতে দেয়নি তারা। এমনকি তাকে নিজ বাড়িতে জিম্মি করে রাখা হয়। রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ছকুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
অমানবিক এ ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করায় পিয়ারুল ইসলাম নামে এক সাংবাদিকের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে দাদন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ও তার ভাই রনজু মিয়া। পরে একটি চা দোকানে উপস্থিত লোকজনের তোপের মুখে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়।এরপর তারা চলে গেলে মোবাইল ফোনে ওই প্রতিবেদককে হত্যার হুমকি দেয় মন্টু মিয়া।
এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ছকু মিয়া বলেন, সারারাত আমাকে নির্যাতন করেছে। হাতে পিঠে ও মুখে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। আমার বড় ভাইকেও লাঠি দিয়ে মারছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৭ টা পর্যন্ত তারা আমাকে পিটাইছে।
ছকু মিয়ার পরিবারের অভিযোগ, রাতভর নির্যাতনে ছকু মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়া হয়নি। না চিকিৎসা; ওষধ। বর্তমানে শরীরের ক্ষত নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ছকু মিয়ার খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে হলেও জানান তিনি।
সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবীনেওয়াজ বলেন, নির্যাতিত রিকশাভ্যান চালক ছকু মিয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রিপন আকন্দ/এমএএস