জয়পুরহাট জেলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর এক গৃহবধূ মৃত্যুর অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় তিন চিকিৎসকসহ ক্লিনিকের মালিক ও ম্যানেজারকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে তদন্তে গিয়ে অস্ত্রোপচার কক্ষের ক্রটি খুঁজে পেয়ে ওই কক্ষ সিলগালা করে ক্লিনিকের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সিভিল সার্জন অফিসের তদন্ত কমিটি।

মারা যাওয়া ওই গৃহবধূর নাম রুমা খাতুন (২৭)। তিনি সদরের নূরপুর গ্রামের শামীম হোসেন সাকিবের স্ত্রী। গত ১৮ অক্টোবর রাতে জেলা শহরের পূর্ববাজার এলাকার বন্ধন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টনসিলের অস্ত্রোপচারের পর রুমার মৃত্যু ঘটে বলে অভিযোগে করেন স্বজনরা।

এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ এনে ওই গৃহবধূর স্বামী শামীম হোসেন সাকিব বাদী হয়ে ঘটনার পরেরদিন সকাল ১০টার দিকে থানায় মামলা করেন। মামলায় তিন চিকিৎসক আসাফুদ্দৌলা, তানভীর হোসেন, আইরিন সুলতানাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ওই ক্লিনিকের মালিক ও ম্যানেজারকে আসামি করা হয়েছে।

জয়পুরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলা আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবার দাফন করেছে।

এদিকে এমন ঘটনায় জেলা সিভিন সার্জন অফিস থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ ওঠা ওই ক্লিনিকে নিয়মিত রোগী দেখা চিকিৎসক সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তুলসী চন্দ্র রায়কে তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। আর সদস্য সচিব হয়েছেন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জুবাইর মো. আল ফয়সাল ও সদস্য করা হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. সাবা আল গালিবকে।

জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মুহা. রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। রোগীর মৃত্যুর কারণ জানার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা প্রথম দিনে (২০ অক্টোবর) ক্লিনিকে গিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ত্রুটি পেয়েছে। পরে সেই কক্ষ সিলগালা করে দিয়ে ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ অক্টোবর দুপুর ২টায় রুমা খাতুনকে টনসিলের অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ডা. আসাফুদ্দৌলা ও জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীর হোসেনের তত্ত্বাবধানের রোগীর অস্ত্রোপচার হয়। শেষে তাকে অচেতন অবস্থায় শয্যায় নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর ছটফট করতে করতে রুমার মৃত্যু হয়। আর মৃত্যু সনদ দেন ওই ক্লিনিকের পরিচালক ডা. আইরিন সুলতানা। এরপর ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছেন বলে স্বজনেরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন অস্ত্রোপচারে যুক্ত দুই চিকিৎসকসহ তিন চিকিৎসক সেখান থেকে চলে যান। স্বজনদের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করে মর্গে পাঠায়।

চম্পক কুমার/আরকে