ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভায় ব্যবসায় আধিপত্য ধরে রাখতে মো. মুজাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আব্দুর রহমান নামে এক নওমুসলিমের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান।

জানা গেছে, আব্দুর রহমান সোনাগাজীতে সম্প্রতি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা শুরু করেন। এর আগে তিনি অভিযুক্ত মো. মুজাহিদুল ইসলামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মুজাহিদ স্টোরে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন।

ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুজাহিদ স্টোরের মালিকের অনুরোধে তার দোকানে ম্যানেজারের চাকরি করেছিলাম। চাকরির শর্ত ছিল ম্যানেজারের কাজ করা ও মাঝে মধ্যে বাসাবাড়িতে সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তিনি আমাকে দিয়ে সারাক্ষণই বাইরে সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করাতেন। এছাড়া বাকিতে বিক্রি করা গ্যাস সিলিন্ডারের টাকা আদায় করতে না পারলে আমার সঙ্গে অসদাচরণ ও নওমুসলিম-মুনাফিক বলেও প্রতিনিয়ত তিরস্কার করতেন। একপর্যায়ে আমি ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের চেষ্টায় সোনাগাজীতে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। এতে মুজাহিদ ও তার মা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা পৌরসভা, বাজার বণিক সমিতি ও ফায়ার সার্ভিসের কাছে অভিযোগ করে আমার ব্যবসা বন্ধের অপচেষ্টা চালান। এতেও কাজ না হওয়ায় আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে চাপ দিতে থাকে। 

তিনি বলেন, গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালের দিকে মুজাহিদ স্টোরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় মুজাহিদের মা আমাকে ডেকে মুজাহিদের নামে বদনাম করেছি বলেই দুটি থাপ্পড় লাগিয়ে দেন। এরপর দোকান থেকে একটি লোহার রড নিয়ে বের হয়ে মুজাহিদ আমাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে আমাকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ইতোমধ্যে ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান থানায় প্রতিকার চাইলেও মামলা না নেওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ঘটনার পর ওইদিন দুপুরের দিকে পুলিশ মুজাহিদকে আটক করে। সন্ধ্যায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে থানার ওসি মামলা নেবেন বলে জানান। ওই সময় মুজাহিদের মা আয়েশা খাতুন সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসেন। পরে গিয়াস উদ্দিন ওসিকে মামলা নিতে নিষেধ করেন। ওসি তার কথামতো মামলা না নিয়ে উল্টো আমাকে শাসায়। এরপরও আমি মামলার ব্যাপারে অটল থাকায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিনের লোকজন থানার ভেতরে আমাকে নানা হুমকি দেন। পরে একপর্যায়ে থানা থেকে বেরিয়ে যাই। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাবু স্টোরের মালিক বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, নওমুসলিম আব্দুর রহমান গত ৭-৮ দিন আগে নতুন দোকান দিয়েছেন। আমার দোকান থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে তিনি বিক্রি করতেন। মুজাহিদ ব্যাপারটি জানার পর আমার দোকানে এসে আব্দুর রহমানকে মালামাল দিতে নিষেধ করেন। ঘটনার দিন মুজাহিদের মা এসে তার (আব্দুর রহমান) কাছে কেন গ্যাস বিক্রি করি জানতে চেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। এরপর আব্দুর রহমান মুজাহিদের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে চড়-থাপ্পড় মেরে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুজাহিদের দোকানটি খালের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাস জায়গার ওপর অবৈধভাবে নির্মিত। দোকানটি উচ্ছেদ করা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইজারা গ্রহীতার সঙ্গে একাধিকবার ঝামেলা হয়েছিল। দখল টিকিয়ে রাখতে মুজাহিদ ও তার মা আয়েশা খাতুন ফেনী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর কাছে গেলে রক্ষা পান। এছাড়া মুজাহিদের বিরুদ্ধে বন্যাকালীন সময়েও গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ সংকটের অযুহাতে দ্বিগুণ দামে বিক্রির অভিযোগে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে প্রশাসন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মুজাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দোকানের চাকরি থেকে বের হওয়ার পর আব্দুর রহমান আমার ক্রেতাদের তার দোকানে টাকা কম রাখবে বলে নিয়ে যায়। আমার নামে বদনামও করে। আমার মা তাকে এসবের কারণ জিজ্ঞেস করায় তার গায়ে হাত তোলার কারণে আব্দুর রহমানকে মেরেছি। আমি তখন স্থির থাকতে পারিনি। এছাড়া আব্দুর রহমান আমার দোকানের কর্মচারী ছিল। বন্যার সময় আমার বিরুদ্ধে বেশি দামে গ্যাস বিক্রির অভিযোগ মিথ্যা।

অবৈধ দখল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দোকানঘর খাস জায়গায় হলেও এটি আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি। এখন আমার দখলে আছে। এসবের কাগজপত্র আমার কাছে আছে। 

জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। সমাধানের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? এরপর তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। 

এদিকে থানায় মামলা গ্রহণ না করার অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা হয় সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ঘটনার পর মুজাহিদকে থানায় আনা হয়েছিল। সেদিন সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের লোকজন বিষয়টি সমাধান করবে বলার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

মামলা করতে চাইলেও সেটি কেন বিবেচনা করা হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মামলা করতে চাইলে এখনো নিব।

তারেক চৌধুরী/আরএআর