রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই দাফন একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বাধার কারণে টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় শহরের বেবিস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় গোরস্থান মসজিদে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে জানাজা নামাজে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নিলেও নিজ দলের কোনো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া তার একমাত্র ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য খান আহম্মেদ শুভ পলাতক থাকায় অংশ নিতে পারেনি।
এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুককে কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় সন্মাননা ছাড়াই সাধারণ দাফনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জেলার অন্যতম সমন্বয়ক ফাহাদুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের তিনি তার লোকজন দিয়ে পিটিয়েছেন, গুলি করেছেন। হামলা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ছিলেন তিনি। এমন মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেতে পারেন না। এছাড়া তিনি আসামি হয়েও তার নিজ বাড়িতে ছিলেন। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। অথচ পুলিশ প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করেনি। অথচ পুলিশ বলেছিল তাকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বারবার কল করা হলেও জেলা প্রশাসক শরীফা হক ফোন রিসিভ করেননি।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।
এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ফজলুর রহমান খান ফারুক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
নিহতের পারিপারিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন যাবৎ ফারুক শারীরিক নানা সমস্যা ভুগছিলেন। শনিবার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফজলুর রহমান ফারুক ১২ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ওয়ার্শী ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পাস করেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফজলুর রহমান খান ফারুক সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ফারুক ১৯৬০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০ সালের গণ পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন, ৬ দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে টাঙ্গাইল জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের ১৭ আক্টাবর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
অভিজিৎ ঘোষ/আরকে