গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশে রাজনীতির যে জমিদারি প্রথা চলে আসছে তা ভেঙে ফেলতে হবে। মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী আর এমপির ছেলে এমপি হবে এটা চলতে দেওয়া হবে না। এজন্য আমরা পরিবর্তনের রাজনীতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। আগে আমাদের নিজেদের পরিবর্তন হতে হবে, তারপর দেশের। আগস্ট বিপ্লবের এই নতুন স্বাধীনতা আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। আমরা আর কোনো দেশের দাসত্ব করতে চাই না। বাংলাদেশ সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। 

শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ঝিনাইদহ জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গত আগস্ট বিপ্লবে গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ঝিনাইদহ গণঅধিকার পরিষদ এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।

নুরুল হক নুর বলেন, শেষ সময়ে এসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। সে কারণেই তিনি বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্ট ড. ইউনূসকে জেলে পাঠাতে চাইছিলেন। ক্ষমতায় থাকতে খুনি শেখ হাসিনা বলতেন তিনি নাকি দেশের মানুষকে খাবার দিতেন, ঘরে ঘরে টেলিভিশন দিয়েছেন, হাতে হাতে মোবাইল ফোন দিয়েছেন। এসব কথা বলে তিনি মানসিক রোগীর মত কর্মকাণ্ড করেছেন। অথচ পালানোর সময় জুতা পর্যন্ত পায়ে দিতে পারেননি। ক্ষমতার লোভে তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের তাড়া নেই। সরকারকে জনগণের পালস বুঝতে হবে। প্রশাসনে এখনো আওয়ামীদের প্রেতাত্মা রয়ে গেছে। গত আড়াই মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। দেশের জনগণ আস্থা বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের চেয়ারে বসিয়েছেন। যদি চালাতে না পারেন তাহলে রাজনৈতিকভাবে দলগুলোর সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিন। দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান আমরা দেখতে চাই না। মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আমরা বার বার হামলার শিকার হয়েছি। এখন মানুষ মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। এই পরিবর্তন ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

তিনি বলেন, গত ৫ দশকে যারাই ক্ষমতায় গেছেন তারাই দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার থেকে শুরু করে প্রাইমারি স্কুলের পিয়ন সকলেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গণঅধিকার পরিষদ দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সমৃদ্ধশীল দেশ ও জাতি গঠনে মাঠে নেমেছে।

নুরুল হক নুর বলেন, থানার ওসি, ইউএনও, এসপি, ডিসি, সকলেই সাধারণ ছাত্র জনতার রক্তের ওপর পা দিয়ে নতুন করে পদায়ন হয়েছে। কাজেই এই কথাটি খেয়াল রেখে আপনাদের কাজ করতে হবে। শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করলে কাউকে ছাড়া হবে না।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় গেলে ঝিনাইদহ জেলার চিকিৎসা খাতে উন্নয়ন এবং বেকার শিক্ষিত যুবকদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটা বাড়ি থেকে একজন করে চাকরি পাবেন। দেশে কেউ বেকার থাকবে না। 

অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো রাশেদ খাঁনকে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয়সহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও গণঅধিকার পরিষদের জেলা সভপতি প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সিনিয়র যুগ্ম সাধরণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, শাকিলউজ্জামান, অ্যাডভোকেট নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, মাজেদুল হক, গোলাম সরোয়ার, জাহিদুর রহমান, তৌফিক শাহরিয়ার খান, রবিউল ইমলাম, খুলনার সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক ইকবাল, রাজশাহীর সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবির, তোফাজ্জেল হোসেন, বরিশালের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তারুজ্জামাল বেলু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক বরকত আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঝিনাইদহ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর