হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল ঢাকার যাত্রাবাড়ি। নিহতের বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নে। অথচ মামলায় আসামি করা হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা কানাডায় অবস্থানকারী হাসিব আলম তালুকদারকে। তিনি স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীরউত্তম সামসুল আলম তালুকদারের বড় ছেলে। হাসিব আলম তালুকদারের ছোট ভাইকেও আসামি করা হয় মামলায়।

হাসিব আলম তালুকদার বিদেশে অবস্থান করেও কীভাবে হত্যা মামলার আসামি হলেন, জানতে খোঁজ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় ঢাকা পোস্ট।

যাত্রাবাড়ি থানায় ৭ সেপ্টেম্বর নিহত শাহীন হাওলাদারের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ২ হাজার জনের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়।

মামলায় পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা বর্তমানে কানাডায় অবস্থানকারী হাসিব আহম্মেদ তালুকদারকে ১৮ নম্বর ও তার ভাই (বাংলাদেশে অবস্থানকারী) আশিকুর রহমানকে ৪৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

নিহতের বাবা ভ্যানচালক আব্দুল মাজেদ বলেন, শাহীনকে গুলি করে মেরে ফেলার পর ওর স্ত্রী আমাদের ছেড়ে আমার বড় ভাই সাদেকের ছেলে মহিউদ্দিনের বাসায় থাকছে। নাতি-নাতনিও আসতে দিচ্ছে না। চেয়েছিলাম ছেলে হত্যার বিচার চাইতে মামলা আমি করবো। কিন্তু মহিউদ্দিন ফুসলিয়ে আমার ছেলের বউকে দিয়ে করিয়েছেন।

নিহত শাহীনের মা জবেদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, শাহীন আমাদের দেখভাল করতেন। এখন আমাদের দেখার কেউ নাই। শাহীন মারা যাওয়ার পরে জামায়াত থেকে ২ লাখ টাকা দিয়েছে ছেলের বউকে। সেই টাকা হাতিয়ে নিতে আমাদের কাছে আসতে দিচ্ছে না মহিউদ্দিন। আমার মনে হয় না শাহীন হত্যার বিচার পাবো। মামলায় হাজার হাজার মানুষ আসামি করেছে। অথচ শুনছি এক পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।

নিহত শাহীনের বড় চাচা সাদেক হাওলাদার বলেন, স্বপ্না (নিহত শাহীনের স্ত্রী) আমাকে বলেছে, এত মানুষ সে আসামি করেনি। এক উকিল ভুল বুঝিয়ে স্বপ্নার স্বাক্ষর নিয়ে তার মনের মতো আসামি করে মামলা দিয়েছে। শুনেছি মামলায় বরিশাল, পটুয়াখালীর অনেককে জড়িয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা কেউ জানি না।

তিনি বলেন, এজাহারে স্বপ্নার মোবাইল নম্বরও ভুল দিয়েছে যেন বাদীকে খুঁজে না পায়।

কথা হয় নিহত শাহীনের স্ত্রী স্বপ্নার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি মামলায় চারজনকে আসামি করেছি। কিন্তু একজন উকিল আসছিল, সে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে দেড় দুই হাজার আসামি করেছেন। তার সঙ্গে যাদের বিরোধী তাদেরকেও আসামি করেছেন।

স্বপ্না বলেন, আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। কিন্তু আমার স্বামীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নির্দোষকে ফাঁসানো ও নতুন কোনো রাজনীতি চাই না।

স্বপ্না মামলার আইনজীবীর নাম বলতে না পারলেও তার যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার আসামি লন্ডন প্রবাসী হাসিব আলম মুঠোফোনে বলেছেন, আমি গত ২৪ জুলাই দেশত্যাগ করি এবং ২৫ জুলাই কানাডা চলে আসি। বর্তমানে আমি এখানে অবস্থান করছি। অথচ আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে আমার ছোট ভাই আশিককেও। মামলায় প্রকৃত আসামিদের পাশাপাশি উদ্দেশ্যমূলক কিছু আসামি করা হয়েছে। আমি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি।

যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহম্মেদ বলেন, এত বড় মামলার বিষয়ে মোবাইলে কথা বলতে চাই না। তবে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে। নিরীহ কাউকে হয়রানি হতে হবে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান বলেন, বাদী যদি মিথ্যা অভিযোগ করে থাকে বা মামলার সত্যতা না থাকে সেক্ষেত্রে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রভিশন আইনে আছে। কোনো অভিযোগই আমরা তদন্ত ছাড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি না।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মাজেদের বড় ছেলে শাহীন।

৮নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. জামাল বলেন, নিহত শাহীনের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। শাহীনকে দাফন দিতে তারা বাড়ি এসেছিলেন। এরপর তারা ঢাকায় ফিরে গেছেন।

(এই সংবাদে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন পটুয়াখালির বাউফল প্রতিনিধি)

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএমকে