রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সৌদি আরব প্রবাসী সবুজ শেখের (৩৫) মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রীর বিচার চেয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে। শোকাহত পরিবার ও এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয় সবুজ শেখকে হত্যা করা হয়েছে। 

থানায় হত্যা মামলা গ্রহণ, সবুজের স্ত্রী রোকসানার ফাঁসির দাবিও করা হয়েছে মানববন্ধন থেকে। রোকসানার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের দাবি করে তার পরকীয়া প্রেমিককেও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। 

গতকাল ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ উপজেলার মকবুলের দোকান এলাকায় এই মানববন্ধন চলাকালে মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত দুই কিলোমিটার করে যানজটের সৃষ্টি হয়।  

পরে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে মামলা নেওয়া এবং দুই দিনের মধ্যে আসামি গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেন।

সবুজের স্বজনরা জানান, টানা ৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সবুজের। তার ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

সবুজ শেখ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমদ্দিন পাড়ার মো. আইনদ্দিন শেখের ছেলে। সবুজ-রোকসানার সংসারে ১০ বছর ও ৩ বছর বয়সী দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

মানববন্ধনে সবুজের মা অভিযোগ করেন, রোকসানার সাথে রাসেল নামে এক যুবকের পরকীয়া প্রেমের  সম্পর্ক রয়েছে। সবুজের বিদেশ থেকে পাঠানো সh টাকা-পয়সা রোকসানা কৌশলে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন। ওরা পরিকল্পিত ভাবে আমার ছেলেকে ঘাস মারার ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। রোকসানা ও রাসেলের ফাঁসি চাই।

সবুজের চাচা কোব্বাত শেখ, চাচাতো বোন হাসিনা বেগম, চাচাতো ভাই হাসেম মিয়াসহ স্বজনরা অভিযোগ করেন, আমরা সবুজের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কয়েকবার মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মামলা না নিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

এদিকে আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে অভিযুক্ত স্ত্রী রোকসানা তার শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, স্বামীর  সম্পত্তি হতে তাকে এবং তার দুই শিশু সন্তানকে বঞ্চিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তার স্বামী ডায়রিয়া-বমির কারণে মারা গেছেন। 

এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন তার ওপর চড়াও হলে পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, সবুজের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা ইতোপূর্বে দায়ের করা হয়েছে। যে কারণে আর কোনো অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তবে স্বজনরা নতুন করে অভিযোগ দিতে চাচ্ছেন। অভিযোগটি আমলে নেওয়া এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।  

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এনএফ