টানা বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বেহাল দশায় পরিণত হয়। সড়কটির মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে বৈদ্যেরবাজার ঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় চার বছর ধরে সড়কটির বেহাল অবস্থা থাকার পর গত বছর সড়কটিতে সংস্কার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এ সংস্কারও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বৃষ্টি হতেই সড়কের বিটুমিন ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এ বছরও সওজ সড়কটিতে কয়েকবার জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে। কিন্তু অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে বিটুমিন ও ইট-পাথর উঠে গেছে। সড়কটির এমন বেহাল অবস্থায় এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা টেকসই সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

সড়কটির পাশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, সোনারগাঁ থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার একাংশের প্রায় ১ লাখ মানুষের প্রতিনিয়ত চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর এসব খানাখন্দে পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। যানবাহনের ধীরগতির কারণে প্রায়ই সড়কটিতে যানজট লেগে থাকে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এতে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের। এ ছাড়া প্রসূতি নারীদেরও হাসপাতালে নিতে দেখা দিয়েছে চরম ঝুঁকি।

সিএনজিচালক রাব্বি বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তায় সিএনজি চালাতে গিয়ে প্রায় নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। দিনে যা আয় করি মেরামতেই তা খরচ হয়ে যায়। আর যানজট তো প্রতিদিন লেগেই থাকে। ২০-২৫ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০ মিনিট।

অটোরিকশাচালক ইসহাক বলেন, সড়কে খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েক দিন আগে যাত্রী নিয়ে গর্তের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছি।

সোনারগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমন বলেন বলেন, এ সড়ক দিয়ে কলেজে আসা-যাওয়া করি। এমনিতেই প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে, তার ওপর অনেক অংশে ভাঙা থাকায় কলেজে যেতে দেরি হয়। সঠিক সময় ক্লাসে উপস্থিত হওয়া যায় না।

রাতুল নামে স্থানীয় একজন বলেন, কয়েকদিন আগে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। ভাঙা রাস্তা ও যানজটে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে হাসপাতালে যেতে আধাঘণ্টা সময় বেশি লাগে। ওই সময়ের প্রতিটা মুহূর্তই মূল্যবান ছিল। আমরা খুব অস্থির ছিলাম। সড়কটির সংস্কার হলে দ্রুত সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানো যাবে।

জরিনা নামের একজন বলেন, রাস্তা ভাঙা থাকায় ডেলিভারির রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া যায় না। 

ষাটোর্ধ্ব রিনা বেগম বলেন, রাস্তায় চলাচল করতে কষ্ট হয়। কোমরে-পায়ে ব্যথা পাই। রাস্তাটা নির্মাণ হলে কষ্ট লাঘব হবে।

ইসহাক নামের একজন বলেন, ভাঙাচোরা সড়কে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে সওজ নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজও শুরু হবে।

এএমকে