পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় হুলাসুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টির বিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থী ২১৫ জন। তার মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ৯৫ জন ও মেয়ে ১২০ জন। এদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ২৮ জন, প্রথম শ্রেণির ৪১ জন, ২য় শ্রেণির ৩৭ জন, তৃতীয় শ্রেণির ৩৫ জন, চতুর্থ শ্রেণির ৩৮ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে মোট ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম ও সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক ফিরোজ মিয়া পিটিআইতে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। আগামী মাস নভেম্বরের ১ তারিখে ট্রেনিং শেষে যোগদানের কথা রয়েছে।

জানা যায়, গত ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে জিন্নাতুন বেগম ও চলতি সালের ৩ সেপ্টেম্বর রুনা লায়লা বদলি হয়ে অন্য বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক ফিরোজ মিয়া চলতি সালের জানুয়ারির ১৫ তারিখে পিটিআইয়ে ট্রেনিংয়ে চলে যান। এসব কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকট হলেও কোন নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়নি। শিক্ষক অনুপাতে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও দুই শিক্ষক দিয়ে ২১৫ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানোয় চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের বিদ্যালয়ে মাত্র দুই স্যার (শিক্ষক) রয়েছেন।  দুজন শিক্ষক থাকায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। ক্লাসের রুটিন অনুসারে আমরা পড়তে পারি না। এমনকি বিদ্যালয়ের পিটিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ঠিকমতো হয় না। তাই শূন্য পদগুলোতে দ্রুত শিক্ষক প্রয়োজন।

তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের ইউনিয়নের হুলাসুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে দুজন শিক্ষক রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও কয়েকবার কথা বলেছি। মাত্র দুজন শিক্ষক দিয়ে ২১৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করানো খুবই কষ্টকর। নিয়মিত পাঠদান না হলে শিক্ষার্থীরা ফলাফলে খারাপ করবে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত শিক্ষক সংকট দূর করা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে। বিদ্যালয়ের ৬টি শ্রেণিতে ২১৫ শিক্ষার্থীর জন্য এখন মাত্র দুজন শিক্ষকই রয়েছি। দুইজন শিক্ষক ছয়টি শ্রেণিতে পাঠদান করতে গিয়ে খুবই হিমশিম খেতে হয়। এভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় না। আমাকে অনেক সময় প্রশাসনিক কাজে উপজেলা সদর কিংবা বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। এমনকি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম করতে গিয়ে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে করে পাঠদান ব্যাহত হয়। এদিকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় অভিভাবকরা অসন্তুষ্ট হয়ে হতাশার কথা জানাচ্ছেন। বিষয়টি বারবার শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে জানিয়ে আসছি। দ্রুত যেন শূন্য পদে শিক্ষক দেওয়া হয়।

তেঁতুলিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে দুই শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করা কষ্টকর। বিষয়টির ব্যাপারে আমি রিপোর্ট পাঠিয়েছি। একজন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। আগামী ১ নভেম্বর তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করবেন। আর হুলাসুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলমকে যোগাযোগ রাখতে বলেছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমেশ চন্দ্র মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টিতে আমি অবগত নই। তেঁতুলিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসকে দোয়েল/পিএইচ