ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। এসব রোগীর শারীরিক অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকরা প্লাটিলেট নির্ণয়ের পরীক্ষা দিলেও হাসপাতালে নেই সিবিসি পরীক্ষার প্লাটিলেট নির্ণয়ের রিএজেন্ট। এতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে করতে হচ্ছে এই পরীক্ষা।

সরেজমিনে বরগুনা জেনারেরল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তবে এসব ভর্তি রোগীর অভিযোগ হাসপাতালে প্লাটিলেট নির্ণয়ের পরীক্ষা করতে না পারায় বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে বাইরের ক্লিনিকে। এতে একদিকে যেমন বেড়েছে ভোগান্তি অপরদিকে খরচ হচ্ছে বাড়তি টাকা।

বরগুনায় এ বছর আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়তে শুরু করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত এসব রোগীর সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে বরগুনা হাসপাতালে চালু করা হয়েছে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা দুটি ইউনিট। চিকিৎসা সেবা প্রদানে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ স্যালাইনের ব্যবস্থা থাকলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শেষ হয়ে গেছে প্লাটিলেট নির্ণয়ের সিবিসি পরীক্ষার রিএজেন্ট। 

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৮০৭ জন রোগী। এর মধ্যে গত এক মাসেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী। গত একমাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫২, নারী ২৯ এবং শিশু রোগীর সংখ্যা ৯ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য বছরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় ৩ হাজার ২০০ সিবিসি টেস্টের রিএজেন্ট ক্রয় করা হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় একজন রোগীকে কয়েকবার প্লাটিলেট পরীক্ষার প্রয়োজন হওয়ায় ফুরিয়ে গেছে সিবিসি পরীক্ষার প্লাটিলেট নির্ণয়ের রিএজেন্ট।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শামসুল হকের স্ত্রী মোসা. রেজবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতাল থেকে যে পরীক্ষা দিয়েছে তা বাইরে থেকে করতে হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এখানে প্লাটিলেট পরীক্ষা করাতে না পেরে আমাদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়েছে। হাসপাতালে রোগী রেখে পরীক্ষার রিপোর্ট আনতে বাইরে যেতে হয়। যদি হাসপাতালেই সব পরীক্ষা করা যেত তাহলে আর রোগী রেখে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। এ ছাড়া টাকা-পয়সা খরচের একটা ব্যাপার আছে, হাসপাতালে যেটা আমি অর্ধেক টাকায় করতে পারতাম সেখানে বাইরের কোনো ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষা করতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।

সোনিয়া আক্তার রেখা ডেঙ্গু আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে সাত দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। বাবার সেবা করতে গিয়ে  সোনিয়াও এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি চার দিন ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। এ ছাড়া আমার বাবা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের পাশাপাশি স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি। এ অবস্থায় তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে প্লাটিলেট পরীক্ষা করানো কষ্টকর। হাসপাতালে পরীক্ষা না থাকায় ভর্তি অসহায় রোগীদের অনেকেই বেশি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে পারছেন না। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই।

মো. জসিম নামের আক্রান্ত এক রোগীর বন্ধু মো. সাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার বন্ধুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। এখান থেকে তিন-চারটা পরীক্ষা দিয়েছে। তার মধ্যে সিবিসি প্লাটিলেট পরীক্ষাটি এখানে নেই। বাইরে থেকে বাড়তি টাকা খরচ করে এ পরীক্ষা করতে হবে। এতে কিছু টাকা বাড়তি খরচের থেকেও হাসপাতালে পরীক্ষা না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে রোগীদের।

প্লাটিলেট নির্ণয়ের সিবিসি পরীক্ষার রিএজেন্ট ফুরিয়ে যাওয়ায় বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস কল্পনা দত্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০-এর বেশি রোগীর প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হয়। রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরীক্ষা বেশি হওয়ায় প্লাটিলেট নির্ণয়ে সিবিসি পরীক্ষার রিএজেন্ট শেষ হয়ে গেছে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম নজমূল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রিএজেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আমাদের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এই মুহূর্তে প্রায় ৯০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। প্রতিদিনই তাদের পরীক্ষা করাতে হয়। এতে চাহিদা বেশি থাকায় রিএজেন্ট শেষ হয়ে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী রিএজেন্ট পেতে আমাদের টেন্ডার কার্যক্রম চলমান আছে বলেও জানান তিনি।

মো. আব্দুল আলীম/এএমকে